addl_sp_sabina_rmp

চ্যালঞ্জিং পেশায় একজন মা যখন একজন এএসপি

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: কর্মক্ষেত্রে নারীদের অনুপ্রবেশ অনেক আগে থেকে হলেও বাংলাদেশের মেয়েরা এখনও চ্যালেঞ্জিং পেশায় যেতে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ নিজের ইচ্ছা শক্তির অভাব, পারিবারিক সহযোগিতার অভাব এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তান লালন পালনের সম্পূর্ণ দায়ভার। 

 

 

 

কারণ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যে পেশায় কিংবা যে অবস্থানেই নারী থাকুক না কেন সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব অনেকখানি মায়ের উপরে ন্যস্ত থাকে। আর তাই পিতা-মাতা আজও তার মেয়েকে শিক্ষক, ডাক্তার কিংবা তুলনামূলক কম চ্যালেঞ্জিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়াতে চান। 

 

বিসিএসও এর ব্যতিক্রম নয়। তুলনামূলক কমসংখ্যক মেয়েরা চ্যালেঞ্জিং পেশা তথা বাংলাদেশ পুলিশে আসে এবং যারা আসেন তাদের অধিকাংশই নিজেদের অদম্য ইচ্ছা ও কর্মশক্তি থাকা সত্ত্বেও যথাযথ পারিবারিক সাপোর্টের অভাব ও সন্তান-সন্ততির কথা চিন্তা করে মাঠ পর্যায়ে কাজের পরিবর্তে ডেস্ক জব ও ঢাকা ভিত্তিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলেন। অথচ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং গ্রামের অশিক্ষিত,স্বল্পশিক্ষিত নির্যাতিত মহিলাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল থানা। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনার অধিকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন, তিনি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। 

 

গ্রামের সাধারণ নির্যাতিত জনমানুষকে সরাসরি আইনগত সহায়তা দিতে মাঠ পর্যায়ের কাজকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি সার্কেল এএসপি হিসেবে বগুড়া জেলার গাবতলী সার্কেলে ও নওগাঁ সদরে প্রায় পাঁচ বছর কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন হিসেবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত আছেন। কর্মক্ষেত্রে অসংখ্য মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, কাছ থেকে নির্যাতিত শিশু ও নারীকে আইনগত সহায়তা প্রদান, নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকে আইনগত সহায়তা দেওয়া ও জনসংযোগ এর মাধ্যমে তিনি কর্মক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। ব্যক্তিগত জীবনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জননী। তাঁর ছেলের বয়স সাত বছর এবং মেয়ের বয়স মাত্র দেড় বছর। 

 

মা হিসেবে প্রায় এক হাতেই তাঁর সন্তানদের মানুষ করছেন। সেক্ষেত্রে সন্তান মানুষ করা এবং পুলিশের মত চ্যালেঞ্জিং পেশায় যেখানে কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের মাঝে বিভেদ করা হয় না, সেখানে প্রতিযোগিতা নিয়ে কাজ করতে পুলিশ অফিসার সাবিনাকে ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষত সন্তানের অসুস্থতার সময় কিছুটা চ্যালেঞ্জ নিতে হলেও সন্তানেরা কখনও তাঁর পেশা তথা কর্মজীবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং মাতৃত্বের শক্তিকে ধারণপোষন করেই তিনি বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। 

 

বিশেষত তিনি যখন বগুড়া জেলার গাবতলী সার্কেলে কর্মরত ছিলেন, তখন তাঁর বড় সন্তানের বয়স মাত্র দুই বছর। সার্কেলে কাজ করায় দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রায় রাতে তিনি বাইরে ডিউটি তদারকি করতে যেতেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “কোন এক রাতে তাঁর বাচ্চা ভীষণ অসুস্থ, এরকম পরিস্থিতিতে গাবতলী থানার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিমা ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। তিনি অসুস্থ দুধের বাচ্চাকে রেখে রাত দুইটার সময় সেখানে উপস্থিত হন এবং তাঁর পেশাদারিত্বের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। সেখানে শতশত মানুষের প্রাণনাশেরও হুমকি ছিল। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তিনি যখন ঘরে ফেরেন তখন প্রায় সকাল। 

 

ঘরে ফিরেই তিনি অসুস্থ সন্তানকে কোলে তুলে নেন আর সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলেন, “হয়ত মা হিসেবে তোমার প্রতি সর্বোচ্চ যত্নশীল আমি হতে পারিনি, তবে তোমার মায়ের পেশাগত দায়িত্বশীল আচরণে আজ হাজার মায়ের কোল পরিপূর্ণ, সন্তান হারাতে হয়নি তাদের”।এরকম অনেক স্মৃতি রয়েছে যেখানে কর্মস্থলে এমনকি অপরাধ সংঘটিত হওয়া ঘটনাস্থলে ও সন্তানকে সাথে নিয়ে গিয়েছেন। সন্তানকে সাথে নিয়েই তিনি সুষ্ঠভাবে তাঁর কর্ম সম্পাদন করেছেন। 

 

তিনি আরও বলেন, “এমনও হয়েছে ইউনিফর্ম পরিধান করে মিশনের সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হওয়ার জন্য বাচ্চা সাথে নিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা গিয়েছি, দূর থেকে যাওয়াতে বাচ্চা ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে কোলে থাকা অবস্থায় বমি করে দিয়েছে। আর কোনো ইউনিফর্ম সাথে না থাকাতে ঐ ইউনিফর্মেই কোনোমতে একটু পরিষ্কার করে নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছি কিন্তু কখনও ভেঙ্গে পড়িনি কারণ আমি বিশ্বাস করি, মাতৃত্ব নিজেই একটি বিরাট শক্তি”। তাইতো সন্তানের কাছেও তিনি আজ আদর্শ মা।

 সন্তানের ভাষ্য  –  ❝মা তোমার মত পুলিশ হতে চাই❞


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.