ভুল চিকিৎসায় ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ
ভুল চিকিৎসায় ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ

রাজশাহী বানেশ্বরের গ্রিন হাসপাতাল যখন ‘কসাইখানা’

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

রমজান আলী, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: গেল মঙ্গলবার রাজশাহীর জেলার বানেশ্বর বাজারের বেসরকারি গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে। গ্রিন হাসপাতালের ঐ মালিকের নাম বাবু।

বর্তমানে গর্ভপাত করানোর পর ভুক্তভোগী ওই নারীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় অত্র এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুক্তভোগী ঐ নারীর নাম তাসলিমা বেগম (৩০)। তিনি পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর জাগিরপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের স্ত্রী।

এ বিষয়ে তাসলিমার স্বামী জালাল উদ্দিন বলেন, আমার স্ত্রী ৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। গত মঙ্গলবার সকালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গ্রিন লাইফ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে হাসপাতালের মালিক বাবু আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি জানান গর্ভের সন্তানটি মৃত। এর পর পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে গর্ভপাত করাতে চুক্তি করেন।

এ সময় আমার ন্ত্রীকে একটি ট্যাবলেট খাওয়াতে বলেন বাবু। ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর আমাদের কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল। পরে পাশের একটি ক্লিনিকে (মা ক্লিনিক) আল্ট্রাসনোগ্রাফি করালে জানতে পারি আমার স্ত্রীর গর্ভের বাচ্চা জীবিত।’

জালালউদ্দিন আরও বলেন, বিষয়টি গ্রিন লাইফের মালিককে বললে তিনি ওই দিন বিকালে আমাদের রাজশাহী শহরে নিয়ে যান।

সেখানে বেলভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তৃতীয় দফা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়। সেখানেও চিকিৎসকরা পেটে বাচ্চা জীবিত আছে বলে জানান। এর কয়েক ঘণ্টা পর ট্যাবলেটের প্রতিক্রিয়ায় আমার স্ত্রীর রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

তিনি আরোও বলেন, বুধবার রাত ১০টার দিকে আমার স্ত্রীর পেটের বাচ্চা পড়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কারণে রাতেই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে আমার স্ত্রীর অবস্থা খুবই খারাপ রয়েছে। সুস্থ হলে থানায় গিয়ে অভিযোগ দেব।

উক্ত বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মতিন বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই নারীর অবস্থা গুরুতর। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের বিরুদ্ধে উঠে এসছে অনেক গুরুতর অভিযোগ।বছরের পর বছর ধরে এই হাসপাতালের রোগীর মৃত্যু যেন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, নজরদারির অভাবে এই ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে চালানো হচ্ছে অপচিকিৎসা।

অভিযোগ রয়েছে, এই শ্রেণীর ক্লিনিকে মালিক নিজেই ডাক্তার সাজেন আবার ভূয়া ডাক্তার সাজিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন সহ বিভিন্ন জটিল রোগের দেন চিকিৎসাও।
এই ক্লিনিকের ব্যানারে একাধিক এমবিবিএস ডাক্তারের সাইন বোর্ড ঝোলানো থাকলেও তাদের নেই নিজস্ব চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ সেবক সেবিকা। ফলে কোনটিতে ভাড়া করা ডাক্তার, কোনটিতে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে বিভিন্ন অপারেশন করায় প্রতিনিয়ত ঘটছে রুগি মৃত্যুর ঘটনা।

এছাড়াও ক্লিনিক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের নামে চিকিৎসা দেয়ার আড়ালে প্রতিষ্ঠান গুলোতে মাদক সেবন ও দেহব্যবসার ঘটনাও ঘটে। জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলা সদর, বানেশ্বর বাজার, ঝলমলিয়া বাজার মিলে অন্তত ২০ টির অধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। এগুলোর অনেকেরই নেই বৈধ কাগজপত্র, একটি ক্লিনিকে ১০ টি রোগীর জন্য সার্বক্ষনিক একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ও একজন ডিপ্লোমা পাশ অভিজ্ঞ সেবক সেবিকা থাকার বিধান রয়েছে।

ভুক্তভুগিদের মধ্যে অনেকেই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও অনেকে অভিযোগের বদলে টাকার বিনিময়ে মৃত্যুর ঘটনাও আপস মিমাংশা করে নিচ্ছেন। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কয়েকটি ক্লিনিকে অভিযান চালানো হলেও স্থায়ী সমাধান মেলেনি।

এ ব্যাপারে থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ভ্রূণ হত্যার কোনো অভিযোগ এখনও থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে অব্যশই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উক্ত বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের এসপির সাথে যোগাযোগ করা হলে মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখার জানান- পুঠিয়া বানেশ্বরের গ্রিন লাইফ হাসপাতাল নিয়ে এর আগেও অনেক অভিযোগ পেয়েছি তবে এবার আমরা বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে আইনি পদক্ষেপ নেব।


 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.