আজ মহিমান্বিত ঈদে মিলাদুন্নবী
আজ মহিমান্বিত ঈদে মিলাদুন্নবী

আজ মহিমান্বিত ঈদে মিলাদুন্নবী

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রবিউল আউয়াল মাস। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ফিরে যাওয়ার মাস। প্রতি বছর এ মাসে মুসলিম উম্মাহ ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে যায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত দিনগুলোয়।

কারণ এই মাসটি যে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর মাস। বিশ্ব নবীর শুভাগমন উপলক্ষ্যে বিশ্বমানবতার আনন্দ-উৎসবের মাস।

১৪৪৩ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল হচ্ছে ২০ অক্টোবর (বুধবার)। দিনটি যথাযথযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়।

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র নগরী মক্কার বিখ্যাত বনু হাশিম বংশে রবিউল আউয়াল মাসের দ্বিতীয় সোমবার (ফীলের বছর) দিনের রাতের মহাসন্ধিক্ষণ ‘সুবহে সাদেক’-এ শুভ জন্মগ্রহণ করেন।

আবার একই দিনে তিনি ইন্তেকাল করলেও মুসলিম উম্মাহর কাছে এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পরিচিত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভ জন্মের দিন ও বছর নিয়ে হাদিসে পাকে আছে সুস্পষ্ট বক্তব্য। তিনি ইংরেজি পঞ্জিকার হিসেব মতে, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০ অথবা ২২ এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করেন।

প্রিয় নবির জন্ম সম্পর্কে মা আমিনার কথা

হজরত ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যখন তাঁর জন্ম হয়েছিল তখন আমার শরীর থেকে এক জ্যোতি বের হয়েছিল; যাতে শামদেশের অট্টালিকাসমূহ আলোকিত হয়েছিল। ইমাম আহমাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইরবায বিন সারিয়া কর্তৃক অনুরূপ একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। (মুখতাসারুস সিরাহ)

প্রিয় নবির শুভাগমনে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাও ঘটেছিল। যা ছিল নবুওয়তের পূর্বাভাস।
তা ছিল-

১। রাসূলের জন্মদিনের রাতে বেলায় হিজাজ বা বর্তমান সৌদি আরব থেকে একটি আলো দৃশ্যমান হয় এবং তা পূর্বাঞ্চলসহ সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ভোরে বিশ্বের সব সম্রাটের সিংহাসন উল্টে পড়েছিল।

২।সততা, আমানতদারীতা, বিশ্বস্ততা ও সত্যবাদীতার জন্য সাদিক উপাধী পাওয়া নবীদের বংশে জন্ম নেয়া হযরত ইমাম সাদিক বলেছেন, শয়তান বা ইবলিস অতীতে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত যেতে পারতো, অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য সে সপ্তম আকাশে যেত। কিন্তু হযরত ঈসা আ.এর জন্মের পর থেকে চতুর্থ আকাশের উপরে ওঠা শয়তানের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এরপর যখন আমাদের নবী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করলেন তখন তার জন্য সব আকাশই নিষিদ্ধ হয়ে যায়।শয়তানকে আকাশের দরজাগুলো থেকে ধূমকেতু দিয়ে বিতাড়ন করা হয়।

৩। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ভোর, যেই ভোর বেলায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করলেন এই ধরনীতে, সেদিন বিশ্বের সবগুলো মূর্তি মাটির দিকে নত হয়ে পড়েছিল।

৪। সেদিনই ইরানের রাজার বিশাল প্রাসাদের বা কিসরার প্রাসাদের বারান্দা কেঁপে ওঠেছিল এবং ছাদের ১৪টি প্রাচীর ধসে পড়েছিল।

৫। সেদিনই ইরানের সভে অঞ্চলের হ্রদটি তলিয়ে শুকিয়ে যায়।কারন বহু বছর ধরে এই হ্রদের পূজা করা হত।

৬। সামাভে অঞ্চলে (কুফা ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী) পানির প্রবাহ সৃষ্টি হওয়া। অথচ বহু বছর ধরে সেখানে কেউ পানি দেখেনি।

৭। ইরানের ফার্স অঞ্চলের (বর্তমান যুগের শিরাজ শহর সংলগ্ন) অগ্নি উপাসনালয়ের আগুন সেই রাতে নিভে যায়। অথচ ওই আগুন এক হাজার বছর পর্যন্ত প্রজ্বলিত ছিল।

৮। সেই দিন বিশ্বের সব রাজা বোবা হয়ে পড়েছিলেন। অর্থাৎ তারা কথা বলতে পারছিলেন না।

৯। সেই দিন গণকদের সব জ্ঞান লুপ্ত হয় এবং জাদুকরদের জাদুগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।

১০। বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সা.এর জন্মের সময় (বড় ও মূল) শয়তান তার সন্তানদের মধ্যে আর্তনাদ করে ওঠে। যার কারণে সবগুলো শয়তান তার কাছে এসে বলে, তুমি কেন এত পেরেশান বা উদ্বিগ্ন হয়েছে? সে বলল, তোমাদের প্রতি আক্ষেপ! রাতের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত দেখছি যে আকাশ ও জমিনের অবস্থা বদলে গেছে। ভূপৃষ্ঠে ঘটে গেছে এক বিরাট ঘটনা। ঈসা আ. ঊর্ধ্ব আকাশে চলে যাওয়ার পর আর কখনও এত বড় ঘটনা ঘটেনি। সবাই গিয়ে খোঁজ-খবর নাও, কি ঘটেছে আজ।
শয়তানরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো এবং ফিরে এসে বললো, আমরা কিছুই তো দেখলাম না। বড় শয়তান বা শয়তানদের নেতা তখন বললো, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া আমারই কাজ।

এরপর সে পবিত্র মক্কার কাবাঘর সংলগ্ন অঞ্চলে এলো। সে দেখল যে ফেরেশতারা কাবাঘরের চারদিক ঘিরে রেখেছেন। শয়তান সেখানে ঢুকতে চাইলে ফেরেশতারা হুংকার দিলেন। ফলে সে ফিরে আসে ও চড়ুই পাখির মতো ছোট হয়ে হেরা পর্বতের দিক থেকে সেখানে প্রবেশ করে। জিবরাইল আ. বললেন, ফিরে যা ওরে অভিশপ্ত! সে বললো, হে জিবরাইল (ফেরেশতা), আমার একটা প্রশ্ন আছে, বলতো আজ রাতে কি ঘটেছে।

জিবরাইল আ. বললেন, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সা. আজ রাতে জন্ম নিয়েছেন।

শয়তান আবার প্রশ্ন করলো, তাঁর মধ্যে কি আমার কোনো (কর্তৃত্বের) অংশ আছে ? জিবরাইল আ. বললেন, না।

শয়তান আবারও প্রশ্ন করলো, তাঁর উম্মতের মধ্যে কি আমার কোনো কর্তৃত্বের অংশ আছে ? জিবরাইল আ. বললেন, হ্যাঁ। ইবলিস বলল, আমি সন্তুষ্ট হলাম।

হযরত আলী রা. এক রেওয়াতে বলেছেন, রাসূল সা.এর জন্মের রাতে পুরো দুনিয়া আলোকিত হয়। প্রতিটি পাথর ও মাটির টুকরো এবং বৃক্ষ বা গাছ হেসে ওঠেছিল, আকাশ ও জমিনের সব কিছু আল্লাহর তাসবিহ প্রশংসা জ্ঞাপন করেছিল।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.