তবে একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশ খুনিই রয়েছে অধরা। হত্যা মামলাগুলোর তদন্তেও তেমন কোন অগ্রগতি নেই। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, চাঁদাবাজি ও জমি-জমা নিয়ে বিরোধসহ নানা কারণে বগুড়ায় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। তবে শহরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশি আর গ্রামে জমি-জমা নিয়ে বিরোধের কারণে বেশি খুনোখুনি হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, বগুড়ায় খুনোখুনি নতুন নয়।
উল্লেখ্য যে, বিগত ১৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খুনের ঘটনা ঘটে আসছে। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। যে ঘটনায় একটি চড় মারারও প্রয়োজন নেই, সেই ঘটনায় মানুষ খুন করা হচ্ছে। এ ছাড়া শহরে যারা খুন হচ্ছে তাদের অনেকেই একাধিক মামলার আসামি। তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের ক্যাডার। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিরোধের সূত্র ধরে খুনের শিকার হচ্ছে ক্যাডাররা। চলতি মাসে বগুড়ায় সবচেয়ে আলোচিত দুটি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি শাজাহানপুরে ও অন্যটি বগুড়া সদরে। গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুন ইউনিয়নের সাবরুল মন্ডলপাড়ায় একটি মুরগির খামারের সামনে দক্ষিণ বগুড়ার ত্রাস ৩০ গ্রামের আতংক সাগর বাহিনীর প্রধান শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার (৩৩) ও তার সহযোগী স্বপন (২৮)কে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে প্রতিপক্ষের লোকজন রামদা দিয়ে কুপিয়ে সাগর ও তার সঙ্গী স্বপনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে চলে যায়। সাগরের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজি মাদকসহ ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে। সে শাজাহানপুর উপজেলার শাবরুল হাটখোলা পাড়ার গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের কর্মী। তার সহযোগী স্বপন একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে। এ সময় সাগরের অপর সহযোগী মুক্তার হোসেন (৩৬) গুরুতর আহত হয়েছে। তার হাতের কবজি কেটে ফেলা হয়। স্থানীয়রা আরও জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবত শাবরুল এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর আগে শাবরুল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বাবু এবং প্রভাষক পারভেজ খুনের ঘটনাও ঘটে।
সাগর হোসেন তালুকদার (৩৩) খুন, হত্যা, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজিসহ মোটামুটি সব ধরনের অপরাধে জড়িয়ে সাগর হয়ে উঠেছিল বগুড়ার শাজাহানপুর, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী সাবরুল বাজার এলাকার অপরাধ জগতের ‘ডন’। নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা সে করেনি।
স্থানীয় ২৫-৩০ তরুণ-যুবককে নিয়ে গড়ে তুলেছিল ‘সাগর বাহিনী’। প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে রীতিমতো ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’ হয়ে ওঠেছিল সাগরবাহিনী। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। কোনঠাসা হয়ে পড়ে সাগর বাহিনী। প্রতিপক্ষ এতোটাই শক্তিশালি হয়ে যায় যে সাগর ও তার বাহিনী পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।
এ অবস্থায় তাকে ও তার এক সহযোগীকে পেয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। তবে আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত পুলিশ এই আলোচিত জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। খুনিরা রয়েছে অধরা।
এদিকে, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বগুড়া সদরের গোকুল ইউনিয়ন পরিষদের কাছে এলোপাথারীভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজানকে হত্যা করা হয়। এরপর মিজানের অনুসারিরা ঘাতক সন্দেহে ঘটনাস্থলেই পিটিয়ে প্রতিপক্ষের সানোয়ার হোসেন লেদো নামে আরও একজন গুরুতর আহত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়া হলে মিজানের অনুুসারীরা সেখানেও লেদোকে আরেক দফা মারধোর করলে তিনি মারা যান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জের ধরে যুবদলের বহিস্কৃত এক নেতার নেতৃত্বে মিজানকে খুন করা হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় ডিবি পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করলেও অধিকাংশ আসামিরা রয়েছে এখনও অধরা।
অপরদিকে, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়ায় সন্ত্রাসীরা চাঁদা না পেয়ে লোহা ব্যবসায়ী রানার মিয়া (৩৫)কে ছুরিকাঘাতে খুন করে। এ সময় স্বামীকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তার স্ত্রী রোজিনা বেগমকেও ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টা করে। এ হত্যার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অগ্রগতি হয়নি মামলার তদন্তেও। এছাড়া, শহরতলির কৈচড় স্কুল মাঠে রিয়াদ নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
এ হত্যার ঘটনায় জিম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও অধিকাংশ আসামি পলাতক রয়েছে। সেইসাথে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে সোনাতলা উপজেলার সিহিপুর দক্ষিণপাড়ায় দুলাল মিয়া নামে এক মুদি দোকানিকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এ খুনের ঘটনায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও ১৬ দিন পার হয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, বগুড়ার কাহালুতে বাড়ির পানি নিস্কাশনের ড্রেন নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির সময় বড় ভাইয়ের স্ত্রী রওশন আরা বেগম (৬০) আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ঘটনাটি ঘটে গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের বানিয়াদিঘী পূর্বপাড়া গ্রামে। রওশন আরা বেগম ওই গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেকেন্দারের ছোট ভাই আব্দুল মজিদ ও তার ভাতিজা রাফিকে আটক করেছে।
এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের প্রতিবেদককে জানান, পূর্ব শত্রতার জের ধরে বগুড়ায় খুনের ঘটনা ঘটছে। তবে পুলিশ এ সব হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। ইতোমধ্যে গোকুলের মিজানুর রহমান মিজান খুনের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তিনি আরোও জানান, পুলিশের কাজে জনগণকে সহযোগিতা করতে হবে।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com