kakon-four-farmers-dead-tragedy
রাজশাহী কাকনে ৪ কৃষক হত্যার পেছনের কারিগর ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

৪ কৃষক হত্যার মাস্টার মাইন্ড রাজশাহী বরেন্দ্র প্রকল্পের কর্মচারী আশিকুর চাঁদ

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: চলতি বছরের ১০ জুলাই রাজশাহী গোদাগাড়ীর পাকড়ি ইউনিয়নের মুসরাপাড়া ইয়াজপুর গ্রামে ১৩৩ একর জমি নিয়ে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩ জনই ছিল কৃষক এবং ৪র্থ জন দিনমজুর। অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত জমিটি ওয়াকফ বলে ভোগ দখল করার চেস্টা করে আসছিল কাকন হাট এলাকার ভূমিদস্যু ২ ভাই। উক্ত ২ ভায়ের মধ্যে একজনের নাম আশিকুর রহমান চাঁন ও অন্যজনের নাম সুর্য।

 

 

 

৪ কৃষক হত্যার দিন রাতে অর্থাৎ ১০/০৭/২০২৩ ইং তারিখে আনুমানিক রাত ১০ টার দিকে আশিকুর রহমান চানকে প্রধান আসামি করে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে আরোও অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনের নামে রাজশাহী গোদাগাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই সুমন। 

 

 

 

গোদাগাড়ী উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, জমিটি ১৯৬৯ সালে তমিরউদ্দিন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ক্রয় করেন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার সুলতানাবাদ এলাকার খন্দকার মোজাম্মেল হক দারোগা। পরে ১৯৭০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নামজারির (খাজনা খারিজ) আবেদন করলে  ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে জমিটির খাজনা খারিজ সম্পূর্ণ হয়। এরপর থেকে দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে ক্রয় সূত্রে জমিটি ভোগ দখল করে আসছিলেন খন্দকার মোজাম্মেল হক দারোগা। 

 

 

 

জমি দখলে  হত্যা পরিকল্পনা করেন বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের কর্মচারী চাঁন 

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১০ জুলাই সকালে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমিটি দখল করতে যায় চান। প্রথমে তারা বর্গাচাষিদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে সোহেল রানা সেখানে গেলে সন্ত্রাসীদের হামলায় তিন বর্গাচাষিসহ খুন হন তিনিও।

 

আরও জানা যায়, প্রধান আসামি চান ওয়াকফ এস্টেটের জমির নামে ওই এলাকায় ৪৬ বিঘা সরকারি খাস জমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করে কিন্তু কিছুদিন আগে গোদাগাড়ী উপজেলার  ইউএনওর নেতৃত্বে সেটি দখলমুক্ত করা হয়। পরে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি বর্তমানে নির্মাণ করা হয়েছে। 

 

 

ক্রয় সূত্রে জমির আরেক মালিক মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘জমিটি যদি কোনো এস্টেটের হতো, তাহলে রেকর্ড খতিয়ানে উল্লেখ থাকত। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে আমরা কিনেছি।’ তার অভিযোগ, হামলাকারী চান বড় মাপের সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু। তার কাজই অন্যের জমি দখল করা।

 

▶ জমি বিক্রয় ও জরিপ

২০১৯ সালে মোজাম্মেল মারা যাওয়ার পর জমিটির বৈধ ওয়ারিশ হন তার ১১ সন্তান। ঐ ১১ সন্তানের কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করেন  সামশুজ্জোহা, সোহেল রানা, মঞ্জুর রহমান ও আমজাদ হোসেন নামের ব্যাক্তিবর্গ।

 

চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সামশুজ্জোহা, সোহেল রানা ও মঞ্জুর রহমান নামজারি তথা খাজনা খারিজের জন্য আবেদন করেন গোদাগাড়ী ভূমি অফিস বরাবর। 

 

আবেদনটি সরেজমিন যাঁচাই বাঁছাই করেন রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। এরপর গত ২০২৩ সালেএ ৫ই মার্চ গোদাগাড়ী উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগো মোক্তারুজ্জানের কাছে প্রতিবেদন দেন কাকনহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।১ সপ্তাহ পর নামজারি অনুমোদনের জন্য রাজশাহী গোদাগাড়ী ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠানো হয়।

 

▶ খাজনা  খারিজ যাঁচাই

এরপর পুনরায় ইউনিয়ন ভূমি অফিসার, কানুনগো, সার্ভেয়ারসহ সরেজমিনে যাঁচাই করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান। পরবর্তীতে চলতি বছরের  ১৪ মার্চ এই জমির নামজারি অনুমোদন দেন গোদাগাড়ী উপজেলার  সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান। বিভিন্ন রেকর্ড খতিয়ান থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালের আরএস রেকর্ডে এ জমির মালিক খন্দকার মোজাম্মেল হক। জমিটি প্রধান আসামি আশিকুর রহমান চান তাদের হাজি মানিউল্লা শেখ ওয়াকফ এস্টেটের জমি দাবি করলেও সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডের কোথাও তার নাম নেই।

 

 

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নের মুসরাপাড়া ইয়াজপুর গ্রামে ১৩৩ একর জমি ওয়াকফ এস্টেটের নামে ছিল। পরে নিয়মবহির্ভূতভাবে এস্টেটের মোতাওয়াল্লি হয় ভূমিদস্যু চান। নজর পড়ে পাশের জমিতেও। পাশেই সোহেল রানার জমিটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। 

 

▶ গোদাগাড়ী ভূমি অফিসের বক্তব্য

এ বিষয়ে জানতে সাবেক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান  বলেন, ৩ ধাপে সব ধরনের নথি যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত নামজারি অনুমোদন দেওয়া হয়। ওয়াকফ স্টেটের কোনো জমি রেজিস্ট্রি হওয়ারই কথা নয়। সাব-রেজিস্ট্রার তা করতেই পারবেন না এবং করবেন না। নামজারি হয় মূলত রেকর্ডীয় খতিয়ান মূলে। এখন প্রায় সব ধরনের কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতেই হচ্ছে। ভুয়া কাজের সুযোগ নেই।

 

 

গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে ৪ জন নিহতের ঘটনাটি পরিকল্পিত। এখানে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। হলে প্রতিপক্ষের কেউ হতাহত হতেন।

 

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মোহন্ত  বলেন, সংঘর্ষের দিন তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যা মামলাটি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। অপরাধী যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

 

অন্যদিকে রাজশাহী গোদাগাড়ীর বর্তমান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ  বলেন, সকল ধরনের নথি যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত নামজারি অনুমোদন দেওয়া হয়। ওয়াকফ স্টেটের কোনো জমি রেজিস্ট্রি হওয়ারই কথা কোথাও উল্লেখ নেই। রাজশাহী জেলা সাব-রেজিস্ট্রার তা করতেই পারবেন না এবং করবেন না। নামজারি হয় মূলত রেকর্ডীয় খতিয়ান মূলে। এখন প্রায় সব ধরনের কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতেই হচ্ছে। ভুয়া কাজের সুযোগ নেই। এরপরেও যদি কেউ ভূয়া কাগজ তৈরী করে ওয়াকফ জমির দাবিদার হওয়ার চেস্টা করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

 

kakon-four-farmers-dead-tragedy-news
খুনীদের পরিবারের সদস্যরাই সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চাইছেন বাদী পক্ষের। যা সবার কাছেই হাস্যকর বলে বিবেচিত হয়েছে।

তবে পরিশেষে যে সকল বিষয় সামনে আসল তার নিম্নরুপ 

 

রাজশাহী কাকনে ৪ কৃষক হত্যাকারীর নির্দেশদাতা রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের আশিকুর রহমান চাঁদ।

হত্যাকারীরা সকলেই এই চাঁদের আত্মীয় স্বজন।

হত্যাকাণ্ডের পর পরেই উল্টো বাদিকে ধরাষায়ী করতে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকারিদের পরিবার। হয়তোবা রাজশাহীর ইতিহাসে এটিই সর্বপ্রথম সংবাদ সম্মেলন খুনীর পরিবারের পক্ষ থেকে।

 

সার্বিক ঘটনায় রাজশাহীর স্থানীয় এক সাংবাদিক এই পরিবারের ইন্ধনদাতা বলে জানিয়েছে চাঁদ ও সুর্যের পরিবারের এক সদস্য।

 

৪ কৃষক হত্যার পর বাদীর ভাই ও সংশ্লিষ্ট আত্মীয় স্বজনদের  চাকরীচ্যুত করার পরিকল্পনা করে হত্যাকারীরা।

 

তবে রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান বলছেন – রাজশাহী বরেন্দ্র প্রকল্পের কর্মচারী আশিকুর রহমান চাঁদ ও তার সূর্য  নীরিহ কৃষক পরিবারসহ  সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। তাদের বিষয়ে মুখ খুলে ইতিপূর্বেও বিভিন্ন হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন এই দুই ভাই। 

 

কাকন হাট এলাকার স্কুল শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেব বলেন – আপনারা থানা আর কোর্ট যাঁচাই করে দেখতে পাবেন চাঁদ আর সূর্য কতগুলো মামলার আসামী এবং কতগুলো মামলার বাদী।

 

আদিবাসিদের মধ্যে থেকে  তরুন মারান্ডি উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে জানান- ২ ভাই  চাঁদ আর সূর্যকে কোন দিন এলাকাবাসী পিটিয়ে যে হত্যা করবেনা এটা বলা যাবেনা। কারন তারা এই এলাকার প্রতিটি জমি নিয়ে মানুষকে হয়রানীর মধ্যে ফেলে রেখেছে আর একের পর হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে।

 

kakon-four-farmers-dead-tragedy
রাজশাহী কাকনে ৪ কৃষক হত্যার পেছনের কারিগর ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে – আশিকুর রহমান চাঁদ রাজশাহী  বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের কর্মচারী হয়েও  হয়েও কিভাবে হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার পরেও চাকরীতে বহাল তবিয়তে থাকতে পারে সেটিই এখন প্রশ্ন ?

 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.