স্টাফ রিপোর্টার :: কক্সবাজারে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার বলেছেন, এভাবে আর যাতে কেউ প্রাণ না হারায় সেটাই তার চাওয়া।
সিনহা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবা-মায়ের গতানুগতিক ভাবনার বিরোধী ছিলেন জানিয়ে তার মা বলেন, “সিনহা বলত আমাদের দেশের পিতা মাতা কেমন জানি শুধু সন্তানদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চান। আরে তোমাদের (পিতা-মাতা) জন্য কেন আমরা বলির পাঠা হব?
“তোমরা সন্তানকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে গল্প করবে, আর আমরা আমাদের তো মনের ইচ্ছা অপূর্ণ থাকবে; কেন? তাই বলত। এগুলো বলে আমার সঙ্গে মজা করত আর আমিও তাকে বুঝাতাম আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এ রকম।”
ছেলের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “বাসায় আসত টুকটাক কাজ করত- আমার মশারি টাঙিয়ে দিত, সারা রাত কাজ করত, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরত-ফিরত। বাসায় এসে নিজে রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে খাবার নামিয়ে গরম করে খেয়ে রান্না ঘর অনেক পরিষ্কার করে রাখত। এখানে যে সে খেয়েছে দেখলে বোঝা যেত না এত পরিষ্কার করে রাখত। কত কথা কত কী… এভাবেই দেখতাম আমার ছেলেকে।”
সিনহার একটি বিষয়ে ভয় কাজ করত জানিয়ে তার মা বলেন, “সে গাড়ি অনেক জোরে চালাত। এত জোরে গাড়ি চালায় কখন যে কী হয়ে যায়, এটাই ভাবতাম।”
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে বাহারছড়া চেকপোস্টের কাছে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। এই হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব।
টেকনাফ থানা থেকে ওই রাতে যোগাযোগ করা হলেও ছেলের মৃত্যুর খবর তাকে দেওয়া হয়নি জানিয়ে সিনহার মা বলেন, “সে রাতে এক ভদ্রলোক ফোন দিয়ে জানতে চাইলেন, সিনহা আপনার কী হয়? আমি বললাম, আমার ছেলে হয়। ওই লোক জানতে চাইলেন, কী করে জানেন? তখন আমি বললাম, টুকটাক কাজ করে। ডকুমেন্টারি বানানোকে আমি টুকটাকই বলি।
“এত রাত্রে এই ভদ্রলোক আমাকে ফোন করে এত কিছু জানতে চাচ্ছে কেন তা ভেবে আমি একটু রূঢ়ভাবে বললাম, আপনি কে? ওই ভদ্রলোক বললেন আপনি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলতেছেন কেন, আমি টেকনাফ থানার ওসি।
“তখন ভাবলাম ওসি যেহেতু, আমার ছেলে যেহেতু গাড়ি চালায় নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। আমি ওসির কাছে জানতে চাইলাম যে, আমার ছেলের ফোনটা বাজছে কিন্তু ফোন ধরছে না ওকে একটু ফোনটা দিন।
“ওসি বলল, দেওয়া যাবে ও একটু দূরে আছে, বলে রেখে দিল। কিন্তু পরে বার বার ফোন দিচ্ছি ফোন ধরছে না।
“রাত ১টা বেজে গেছে, কিন্তু আমি কার কাছ থেকে খবর নিব অস্থির হয়ে যাচ্ছি। যেসব ছেলেরা তার সঙ্গে কাজ করে তাদের ফোন নম্বর আমার কাছে ছিল না।”
সিনহা এর আগেও একবার হাওরে গেলে তাকে ফোনে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন জানিয়ে নাসিমা আক্তার বলেন, “ফিরে আসার পরে বললাম, এভাবে ফোনে না পেলে তো আমি অস্থির হয়ে যাই, আমি চিন্তা করি তখন সে তার দুই কোর্সমেটের নম্বর আমাকে দেয়। সেই রাতে আমার মোবাইলে সেভ করে দেওয়া ওই দুই কোর্সমেটের নম্বর খুঁজে পাই না, মাথাও ঠিক মতো কাজ করছিল না। পরে মেজর মহসিনের নম্বর খুঁজে পাই এবং তাকে ফোন করি।
“মহসিনকে বললাম টেকনাফ থানার ওসি ফোন করেছে তখন সে আমাকে জানায়, ওখানে আমাদের কোর্সমেট আছে আপনি টেনশন করবেন না। আপনি ঘুমান, ওরা দেখতেছে।
“সকালে মহসিনকে ফোন দিতে একটু সময় নিচ্ছি কারণ ঈদের দিন ওদের অনেক বিধি থাকে, আমি তো আমার ছেলেকে দেখেছি তাই একটু সময় নিচ্ছি ওকে ফোন দিতে। এর মধ্যে সকাল ১১টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ এসেছে। জানতে চাইল এটা মেজর সিনহার বাসা কি না। আমি ভাবলাম অনেকে ভুয়া মেজর পরিচয় দিয়ে থাকে; হয়ত আমার ছেলে সত্যিকারের সাবেক মেজর কি না এটা যাচাই করতে এসেছেন।
“আমি ভেবেছি ওখানে (কক্সবাজার) যদি কোনো জটিলতা তৈরি হয়ে থাকে তাহলে এটা থাকবে না। আমি পুলিশকে সহযোগিতা করেছি এবং ওনারাও আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে চলে যান।
“তবে পুলিশ জানতে চেয়েছিল, সিনহা কেন চাকরি ছেড়েছে এবং কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল কি না। আমি যা যা সত্য তা বলে দিয়েছি এবং সে কখনও কোনো দিন দেখিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে।”
সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার বলেন, “আমাদের একটাই আবেদন, দ্রুত তদন্ত করে এবং সঠিকভাবে তদন্ত করে বিচারটা যেন হয়।
“এটা যেন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। অন্যদের মোটিভেট করে যে, আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল এবং আমাদের দেশে আইন আছে, আমাদের দেশে বিচার হয়।”
রাওয়া-এর চেয়ারম্যান খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, “মর্নিং শোজ দা ডে। এ পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে আমরা যা দেখেছি, সরকারের যে মনোভাব, প্রশাসনের যে মনোভাব। আপনারা শুনতে পেলেন সিনহার মাও খুশি এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশনের আমি চেয়ারম্যান, তাদের পক্ষ হয়ে বলছি, আমরা এ পর্য
Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.
Subscribe to get the latest posts sent to your email.