কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন:: কোনো কিছুর ঘষা লাগলেই ছাদের প্যাটার্ন স্টোন (ওয়ারিং কোর্স) ভেঙে বেরিয়ে আসছে বালু আর ছোট ছোট পাথর।কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনের দোতলা ভবনের বর্তমান অবস্থা এটি। রেলস্টেশন ভবন নির্মাণে ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ ভবনের ঠিকাদার ছিলেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কাজ শেষে রেলস্টেশন ভবনটি হস্তান্তর করেন তিনি। এরই মধ্যে ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
খবর পেয়ে গত সোমবার বিকেলে কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনের নতুন ভবনটি পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।এ সময় ভবনটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন তারা। তবে স্টেশনমাস্টার উপস্থিত না থাকায় নতুন ভবনের ভিআইপি রুমে প্রবেশ করতে পারেননি তারা। নতুন ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছর দুয়েক আগে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় রেলস্টেশনের নতুন ভবন। নির্মাণকাজ করেন ঠিকাদার রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের ছত্রচ্ছায়ায় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করেন ঠিকাদার। সেই সঙ্গে দুর্নীতি করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবনটি নির্মাণের সময় প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও ঠিকাদারের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রভাবের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় স্থানীয়রা। কাজ চলাকালীন স্থানীয় ভাড়াটে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বেশ কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করা হয়। প্রতিবাদকারীদের মামলা আর হুমকির ভয় দেখানো হয়। ফলে দোতলা ভবনটি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ভবনটি নির্মাণে নিম্নমানের ইট, খোয়া ব্যবহার ছাড়াও বেশি পরিমাণ বালু ও কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। প্যাটার্ন স্টোন ঢালাই খুবই নিম্নমানের হওয়ায় পানি জমে ছাদ বেয়ে পানি ঢুকছে ভবনের ভেতর। ভবনটি নির্মাণের সময় প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার যুবলীগ নেতা পুলিশ দিয়ে আমাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়েছেন।
ভবনটি নির্মাণের এক রাজমিস্ত্রি নাম প্রকাশের না করার শর্তে বলেন, ‘আমি কাজের নকশা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার দেখাননি। উল্টো আমাকে হুমকি দিয়ে যেভাবে নির্মাণ করতে বলেছেন, আমি সেভাবেই ভবনের কাজ করেছি। মূল ভবনসহ সবক্ষেত্রে কম রড ব্যবহার করা হয়েছে। ঢালাইয়ে খোয়া আর সিমেন্টের অনুপাত ৪:১ হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ৬:১ ও ৮:১ দেয়া হয়েছে। আমরা আগেই বলেছি, এভাবে ভবন নির্মাণ করলে টিকবে না। ঠিকাদার বলেছেন যতদিন টিকে টিকুক।’
শুরুতে ভবনের কাজ করা শ্রমিক রায়হান আলী বলেন, রড সিমেন্ট কম দেয়ার প্রতিবাদ করায় আমাকে কাজ থেকে বাদ দিয়েছেন ঠিকাদারের লোকজন। পুরো ভবনটি ডিজাইন বহির্ভূতভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের বৈদ্যুতিক সামগ্রীও নিম্নমানের। সেপটিক ট্যাংক, ভবনের রঙ, দরজা-জালানাসহ সব কাজেই অনিয়ম হয়েছে।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com