রাজশাহীর পুঠিয়ায় অপচিকিৎসা দিয়েই চলছে জনসেবা ক্লিনিক

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

পুঠিয়া থানা প্রতিনিধি,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন : রাজশাহীর পুঠিয়ায় ‘জনসেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার’র অসামাজিক কার্যকলাপ ও অপচিকিৎসার কারনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগিরা বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বরং ক্লিনিক মালিক স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে দেদারছে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভুক্তভোগিদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়া সদরে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের নিচতলায় জনসেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসে বুলবুল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। ক্লিনিকের নাম জনসেবা রাখা হলেও তা এখন জনদূর্ভোগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

 

ক্লিনিকের সামনে বড় বড় চিকিৎসকের নামে সাইবোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও এদের মধ্যে কোনো চিকিৎসক এখানে আসেন না। দু’একজন আসলেও তারা নিয়মিত নয়। চিকিৎসক না আসলেও ক্লিনিক মালিক বসে নেই। তিনি অল্প টাকায় ভালো চিকিৎসা দেয়ার নামে দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগি সংগ্রহ করে ভর্তি করাচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ ছোট-খাট রোগে মোটামুটি সুস্থ্য হলেও অনেকের আরো দুর্ভোগের কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে।

 

এছাড়া ওই ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে সুন্দরী মেয়েদের চাকুরি দেয়ার নামে অসামাজিক কাজ করানোর অভিযোগ করেছেন অনেকেই।

 

পুঠিয়া সদর এলাকার কাঠালবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আবুল খায়ের স্ত্রী বলেন, গত বছরের শেষের দিকে এই ক্লিনিকের এক দালালের প্রলোভনে আমি জরায়ু অপারেশন করাতে গিয়েছিলাম। পরে সেখানকার ডাক্তার জরাযুর পরিবর্তে আমার মূত্রনালি কেটে ফেলেছে। এতে গত এক বছর থেকে আমি চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি।

 

শাহবাজপুর এলাকার আলী হোসেন বলেন, শারিরিক সমস্যা দেখা দেয়ায় আমার মেয়ের এমআর করাতে এই ক্লিনিকে এনেছিলাম। সেখান একজন ভ’য়া ডাক্তার মেয়ের জরায়ু কেটে ফেলে। পরে তাকে দীর্ঘদিন রামেক হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো হয়।

 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই ক্লিনিকের সাবেক একজন নারী কর্মচারী বলেন, উপজেলার মধ্যে যত ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টার রয়েছে এর মধ্যে জনসেবা ক্লিনিকের সেবার মান খুবই খারাপ। মালিকপক্ষ বড় বড় চিকিৎসকের নাম ভাঙিয়ে স্বামী-স্ত্রী ডা. সেজে সকল প্রকার অপারেশন করছে। তাদের ভুল অপারেশনের কারণে অনেক রোগি পঙ্গু হওয়ার পথে। পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে সেবিকার পরিচয়ে এক ডজন সুন্দরী নারী রেখে অসামাজিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বিষয়গুলোর সত্যতা নিশ্চিত করে পৌরসভা মেয়র রবিউল ইসলাম রবি উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে বলেন, জনসেবা ক্লিনিকের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি রোগিকে অপারেশনের নামে পিত্তথলি কেটে দেয়া ও অপর এক কিশোরীকে ওই ক্লিনিকে চাকুরী দেয়ার নামে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়।

এ দুই ঘটনায় ভুক্তভোগির পরিবার আমার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। পরে শুনেছি টাকা-পয়সা দিয়ে ক্লিনিক মালিক তাদের ম্যানেজ করেছে। অপরদিকে ওই ক্লিনিকে গভীর রাতে বহিরাগত লোকজন আসা যাওয়া করে বলে পুঠিয়া ত্রিমোহনী বাজার সমিতির একাধিক নৈশপ্রহরীরা আমাকে অবহিত করেছেন।

এ বিষয়ে জনসেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক বুলবুল আহমেদ বলেন, এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ছিল তা সমঝোতা হয়ে গেছে। আর এই ক্লিনিকে অসামাজিক কার্যকলাপ ও ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার অফিসে আসেন স্বাক্ষাতে কথা হবে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনকে বলেন, ওই ক্লিনিকের অনিয়মের বিষয়ে আমিও শুনেছি। তবে এখনো কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ দেননি। তবে আমরা তাদের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখে শিঘ্রয় আইনী ব্যবস্থা নেব।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.