রাজশাহীর তিন উপজেলার হাজারও মানুষ পানিবন্দী:উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: পবার মধ্যচরে চার বছর ধরে বাস করেন সাবিহা নামের এক ষাটোর্ধ্ব নারী। নাতি-পুত্র মিলে তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭। বন্যার কারণে গত আট দিন ধরে নগরীর চর সাতবাড়িয়ায় আত্মীয়ের বাসায় থাকছেন । বন্যায় তাদের কৃষিজমি ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। কবে নিজ আবাসভূমিতে ফিরে যাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই তার।

সাবিহা আক্ষেপ করে বলেন, ‘জায়গা নাই, জমি নাই, বাড়িঘর নাই, পরের বাড়িতে আছি। বৃষ্টির কারণে কোনো কাজকর্ম নাই। তিন বেলার অন্নসংস্থান করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

তার স্বামী ও সন্তানরা দিনমজুরের কাজ করেন। একে তো অসময় আবার বৃষ্টির কারণে কাজকাম নাই বলে জানান তিনি। পবার মধ্যচরেই হায়দার আলী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার চরেই জন্ম। চর খিদিরপুরে বড় হয়েছি। ২০১৫ সালে চর খিদিরপুর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় পবার মধ্যচরে আবাস গড়ি। এবছর বন্যায় তা-ও তলিয়ে গেলো। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়েই পার করলাম জীবন।

৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা ১১টায় নগরীর চর সাতবাড়িয়ায় প্রায় ৫০ জন বানভাসি মানুষের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা সবাই তাদের বাড়িঘর ও খেতের জমি বিলীন হওয়ার কথা বলেন। ত্রাণ চান অসহায়ত্ব ঘুচানোর জন্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পবার হরিয়ান ইউনিয়নের চর খিদিরপুর এলাকা ২০১৫ সালে ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেখান থেকে ৬০০ পরিবারের মধ্যে ৩০০ পরিবারকে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার পবার মধ্যচরে পুর্নবাসিত করেন। সেখানে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সৌর বিদ্যুৎ, টয়লেট, টিউবওয়েল ও সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবছরের প্লাবনে সব তলিয়ে গেছে। পবার হরিয়ান ইউপি চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, চরখানপুর ও মধ্যচর মিলে বানভাসি মানুষদের ৩৬৫ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার ও চাল বিতরণ করা হয়েছে।

শুধু পবা উপজেলাতেই না, প্লাবনে জেলার বাঘা ও গোদাগাড়ির মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় হিসাবমতে, বাঘার ১৫টি চরের প্রায় ৩ হাজার ৬০০ পরিবার গত ৭ দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন। পবা ও গোদাগাড়িতে পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে ভাঙনের কবলে পড়েছে পদ্মাপাড়ে বসবাসকারী মানুষ। বাঘায় পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় এরই মধ্যে ১১টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দু’টি স্কুল ভাঙনের কবলে পড়ার শঙ্কায় পড়েছে। স্থানীয় বাজার ও মসজিদও যেকোনো সময় বিলীন হতে পারে পদ্মায়। বাঘা উপজেলার নির্বাহী অফিসার শাহীন রেজা বলেন, ‘আমরা ভাঙন কবলিত এলাকায় সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছি। এর মধ্যে দেড় হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ৮৫টি পরিবারের বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বাঘা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবিএম সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্কুলের আঙিনায় পানি উঠে যাওয়ায় আমরা এর মধ্যে ১১টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, জেলার পবা, গোদাগাড়ি ও বাঘা উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে পবার মধ্যচরের ৩৬৫টি পরিবারের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আর গোদাগাড়িতে ৫৫ পরিবার ও বাঘায় এক হাজার ৫৮৬ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এদের মধ্যে ৯০৪ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৪৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি। রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক জানান, প্লাবনে জেলায় ১০২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবই চরাঞ্চলের ফসল। তার মধ্যে মাস কলাইয়ের ডাল বেশি।

এদিকে উজানের ঢল, বন্যার পানি ও টানা বৃষ্টিতে রাজশাহীর পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬ টায় পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ৪৯ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক শূন্য এক মিটার। এর আগের দিন রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ সেন্টিমিটার। বিহারের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, ‘রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ১২ ঘণ্টায় ১০ সে.মি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী অংশ বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যাপক নদী ভাঙন হচ্ছে।’ পাওবো’র মিটার গেজ মো. এনামুল হক বলেন, ‘রাজশাহীতে টানা ৭/৮ দিন ধরে যে বৃষ্টি হচ্ছে, তা খুব বেশি নয়। মূলত পার্শ্ব


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.