রাজশাহীতে নেসকোকে আলটিমেটাম

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজশাহী নগরীতে প্রি-পেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। সাধারণ বৈদ্যুতিক মিটার ছেড়ে প্রি-পেইড মিটারে আসতে চটকদার অফারও দিয়েছে সংস্থাটি।

তবে এই মিটার চান না রাজশাহীর সাধারণ মানুষ। রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও এর বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, করোনাকালে এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নড়বড়ে। এ অবস্থায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের খরচ বহন করা মানুষের জন্য কষ্টকর। গত ৮ অক্টোবর থেকে রাজশাহী, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় পাঁচ লাখ স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করেছে নেসকো। সেদিন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে প্রি-পেইড মিটার বসানোর কার্যক্রম চলছে।

কিন্তু এই মিটার নিয়ে দিন দিন সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। উদ্বোধনের পর গত ২৮ অক্টোবর এর বিরোধিতা করে মানববন্ধন-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনটি প্রি-পেইড মিটার বাতিল করার দাবি জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে একটি স্মারকলিপিও দেয়। এর অনুলিপি রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেয়া হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, রাজশাহীতে কোনো শিল্প কারখানা নেই। মানুষের আয়ের বড় কোনো উৎসও নেই। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর কৃষিভিত্তিক এই অঞ্চলের অর্থনীতি। এখানে নেসকো মিটার না দেখেই প্রতিমাসে গ্রাহকের কাছ থেকে ভৌতিক বিল আদায় করছে। কিন্তু সামান্য ঝড়ো বাতাসে এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে এখানে শর্টসার্কিটের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভু-গর্ভস্থ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ গ্রাহক ভোগান্তি বাড়াতে প্রি-পেইড মিটার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, প্রি-পেইড মিটারের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামের গ্রাহকদের সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ভেনডিং মেশিনে মিটার রিচার্জের জন্য ওই অঞ্চলের মানুষদের বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা যায়। মিটার রিচার্জের জন্য তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। তাদের দাবি, এই প্রি-পেইড মিটার যেন রাজশাহীবাসীর ওপর চাপিয়ে দেয়া না হয়।

এদিকে সোমবার (১১ জানুয়ারি) রাতে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভা থেকেও এ দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী। এই সভা থেকে প্রি-পেইড মিটার বসানোর কার্যক্রম বন্ধের জন্য নেসকোকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এর মধ্যে দাবির প্রতিফলন না হলে কর্মসূচি গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান বলেন, নগরীতে ভু-গর্ভস্থ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না নেসকো। যে সেবার নামে নেসকো গঠন হয়েছে সেই সেবা রাজশাহীর মানুষ পাচ্ছেন না। উল্টো ভুতুড়ে বিল, অনিয়ম-দুর্নীতি আর বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

তিনি বলেন, এদিকে খেয়াল না করে নেসকো প্রি-পেইড মিটারের দিকে ঝুঁকেছে। অথচ রাজশাহীর মানুষ বিল বকেয়া রাখে না। এবার নেসকো ছয় কোটি টাকা লাভও করেছে। তারপরও বর্তমানে গ্রাহকের সচল সব মিটার ফেলে দিয়ে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর কারণে মানুষ আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু বলেন, যেখানেই প্রি-পেইড মিটার চালু হয়েছে সেখানেই মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, রাজশাহীতে যখন গ্যাস আসে তখন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাড়িতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংযোগ দেয়া হয়েছিল। প্রি-পেইড মিটার যদি এতই ভালো হয় তাহলে সেটি আগে সেইসব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাড়িতে আগে দেয়া হোক। তারা ধারণা অর্জন করুক, তারপর আমরা সাধারণ মানুষ এই মিটার নেব। তার আগে নয়।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.