যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড দিবস পালিত:উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::- ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস আজ। ১৯৫০ সালের এ দিনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সাত কর্মীকে হত্যা করে পাকিস্তানি সিপাহী।

দিবসটি উপলক্ষে বুধবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী জেলা কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নে উদ্যোগে ২২ সদস্যের একটি দল কারাগারে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রাজশাহী জেলার সভাপতি এনামুল হক, সাধারন সম্পাদক রাগিব আহসান মুন্না, সম্পাদক মন্ডলির সদস্য প্রশান্ত পান্ডে, মামুন রেজা জুয়েল, জেলা সহ-সম্পাদক আফতাব হোসেন কাজল, সিপিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সভাপতি ইসরাইল হোসেন সেন্টু, নওগাঁর সভাপতি মহসিন রেজা, সম্পাদক সফিকুল ইসলাম,সিপিবি নাটোর জেলার সাধারন সম্পাদক নির্মল চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রইউনিয়ন নেতা এ.এম.শাকিল, রাজশাহী জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি প্রান্ত প্রতীম পান্ডে প্রমুখ।

শহীদদের চেতনা ধারণ করতে এবং তাদের অপূর্ণস্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কর্মীদের সাথে সংক্ষিপ্ত শপথ বাক্য পাঠ করেন জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাগীব আহসান মুন্না।

উল্লেখ্য, কারা কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহার, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ এবং কারাবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুযোগ না দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করায় সেদিন হত্যা করা হয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এই সকল বীর সেনানীদের।

নিহতরা হলেন- কমরেড বিজন সেন (রাজশাহী), কম্পরাম সিং (দিনাজপুর), আনোয়ার হোসেন (খুলনা), সুধীন ধর (রংপুর), হানিফ শেখ (কুষ্টিয়া), সুখেন ভট্টাচার্য (ময়মনসিংহ), দেলোয়ার হোসেন (কুষ্টিয়া)। খাপড়া ওয়ার্ডে ওই বর্বর আক্রমণে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন আরও ৩১জন রাজবন্দি।

সেদিন সকাল ৯টায় কমরেডরা আলোচনায় বসলে জেল সুপার বিল সরাসরি ঢুকে পড়েন খাপড়া ওয়ার্ডে। জেল সুপার রাজবন্দিদের ১৪ নম্বর সেলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। কমরেড আবদুল হক বিলকে এ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে গেলেই জেল সুপার চিৎকার করে ‘খাপড়া’র দরজা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ দেওয়ার পরই বিল দৌড়ে বের হয়ে যেতে চাইলে তার পথরোধ করে দাঁড়ান কমরেড বাবর আলী, দেলোয়ার ও রশীদ উদ্দীন।

বিল হান্টারের আঘাতে বাবর আলীর কব্জি ভেঙে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে হুইসিল বাজান। সঙ্গে সঙ্গে চল্লিশজন সশস্ত্র সিপাহী ঘিরে ফেলে খাপড়া ওয়ার্ড। ‘খাপড়া’র ভেতরে সে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হয়, মূল দরজায় প্রতিরোধ রাখতে হবে। কমরেড প্রসাদ রায় ছুটে গিয়ে ‘খাপড়া’র নড়বড়ে দরজায় কাঁধ লাগিয়ে আটকে রাখেন। উল্টো পাশের প্রবল ধাক্কায় দরজা আটকে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বাইরে থেকে লাঠিধারী পুলিশ জানালা দিয়ে লাঠি ছুড়ে মারতে থাকে। নিরস্ত্র রাজবন্দিরা থালা-বাটি, দোয়াত-ওষুধের শিশি ছুড়ে আক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করতে থাকেন। এরই মধ্যে দরজার ফাঁক দিয়ে নল ঢুকিয়ে গুলি চালালে কমরেড প্রসাদ রায়ের বাম ঊরুতে সাতটি বুলেট বিদ্ধ হয়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বৃষ্টির মতো গুলি চালাতে চালাতে ‘খাপড়া’য় ঢুকে পড়ে আর্মড পুলিশ।

রাইফেলের গর্জনে ফেটে পড়ে কারাগার। রক্তে ভেসে যায় খাপড়া ওয়ার্ড। সেখানেই ঝরে পড়ে ছয়জন কমরেডের জীবন। নিরস্ত্র ৩৯ জন বন্দির ওপর ১৮০টি গুলি বর্ষণ করা হয়! অবিরাম গুলির পর শুরু হয় তিন দফায় লাঠিচার্জ। এর মধ্যে একবারের জন্য ‘খাপড়া’য় ঢোকেন বিল। আবদুল হককে খুঁজে বের করে হাতের হান্টার দিয়ে তার মাথায় তীব্র আঘাত করেন। মাথা ফেটে লুটিয়ে পড়েন তিনি। গুলিবিদ্ধ বিজন সেন চিৎকার করে বলে ওঠেন ‘আমরা মরি নাই কমরেড, আমরা বিজয়ী হয়েছি, ভবিষ্যৎ আমাদের।’ এ কথা বলেই প্রাণ হারান তিনি। হাসপাতালে মারা যান কমরেড কম্পরাম সিং।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………… উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.