স্টাফ রিপোর্টার,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: মূল ফটকের খানিকটা ভেতরে থানা ভবন। প্রবেশপথ পাহারায় দুই পুলিশ সদস্য। তাঁদের পেরিয়ে থানার ভেতরে যাওয়ার সাহস করতে পারলেন না পিয়ারুল ইসলাম। আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছিলেন পুলিশের এক সদস্য। তিনি এগিয়ে গিয়ে পিয়ারুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কাকে চাচ্ছেন আপনি?’ আড়ষ্ট গলায় পিয়ারুল ইসলামের উত্তর, ‘ওসি স্যারের কাছে আসছিলাম।’ শুনেই থানার ওসির রুমের জটলার দিকে ইঙ্গিত করে পুলিশ সদস্য জানালেন, ওসি স্যার ওখানে আছেন।
‘ওসি স্যারের রুমে এত লোক কেন?’ পিয়ারুল ইসলামের এমন প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসে ওই পুলিশ সদস্য বললেন, ‘দিনের বেলায় কিংবা রাতে স্যার এভাবেই ব্যাস্ত সময় থাকেন।’ অবাক পিয়ারুল ইসলাম জটলার দিকে এগিয়ে গেলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানের কাছে ডেকে পিয়ারুল ইসলামের সমস্যা শুনে পরামর্শ দিলেন। পিয়ারুল বললেন, ‘ওসিকে না পাইলে আজও হয়তো বাড়ি ফিরে যেতে হতো। সাহস করে থানায় ঢোকা আর হতো না।’
জনগণের আরও কাছাকাছি পুলিশকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নিয়েছেন সদর থানার ওসি জিয়াউর রহমান জিয়া। সবারই সমস্যা শোনেন তিনি। সবাই তার রুমে অনুমতি ছাড়াই যে কোন সমস্যা নিয়ে যেতে পারেন। পরামর্শও নিতে পারেন ভুক্তভোগীরা।
ওসি জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, পুলিশের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে পুলিশের কাছে আসতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জড়তা কাজ করে। জনগণের আরও কাছাকাছি যাওয়ার লক্ষ্য থেকেই আমার এই উদ্দোগ।
এখন অনেকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। খোলামনে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। তিনিও পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
সামনে টেবিল-চেয়ার পেতে দরবারে আসা মানুষজনের কথা শুনছেন ওসি জিয়াউর রহমান জিয়া। সেখানে এসে ওসিকে কেউ জানাচ্ছেন ব্যক্তিগত অভিযোগ, কেউ বলছেন এলাকার নানা সমস্যার কথা। আবার অনেকে অপরাধমুক্ত এলাকা গড়তে দিচ্ছেন নানা প্রস্তাব। ওসি নিজেই সেসব অভিযোগ শুনে বিষয়গুলো তাৎক্ষণিকই সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
সদর উপজেলার বাসিন্দা রুবেল আলীর ড্যানোর বাড়িতে সম্প্রতি চুরি হয়েছে। তিনি একা থানায় আসতে সাহস পাচ্ছিলেন না। পরে স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষককে নিয়ে তিনি থানায় আসেন। ওসি তাঁদের কথা শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। রুবেল আলীর ড্যানো বলেন, থানায় আসতে মানুষের যে ভীতি কাজ করত, তা এই উদ্যোগের কারণে দূর হয়ে যাবে।
বারঘরিয়ার স্থানীয় মুদির ব্যবসায়ী লুতফর রহমান বলেন, ‘আমার একটা মামলা আছে। কিন্তু পুলিশ আসামি ধরে না। তাই ওসি স্যারের কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আসছিলাম। ওসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন, তিনি পুলিশ পাঠাবেন। ওসির সঙ্গে কথা বলার পর স্বস্তি পাচ্ছি।
ওসি জিয়া বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসার পর পুলিশ ভীতির পুরোনো চিত্র দেখতে পান। অনেকে থানায় ঢুকতে ভয় পান। থানায় এলেও ওসির কক্ষে প্রবেশ করতে সাহস পান না। থানায় একা একা আসতে চান না। আসার সময় রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, উকিল ধরেন। থানায় ও ওসির কক্ষে ঢুকতে মানুষের ভয় কাটানোর জন্যই তিনি এভাবেই বসার পদক্ষেপ নেন। এতে মানুষ জানতে পারবেন, পুলিশ তাঁদের বন্ধু, তাঁদের কল্যাণেই কাজ করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টি.এম. মুজাহি মুঠোফোনে বলেন, পুলিশ সব সময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করে। ওসি জিয়াউর রহমান জিয়ার এই উদ্যোগ পুলিশকে জনগণের আরও কাছে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে। তাঁর এই উদ্যোগ জেলার অন্য সব থানায় ছড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com