বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক হলুদ সাংবাদিকতার জনক

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক রিপোর্ট ::  জোসেফ পুলিৎজারের নাম সকলেই শুনেছেন। লেখালেখি ও সাংবাদিকতার ওপর বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কারটি হলো পুলিৎজার অ্যাওয়ার্ড। পুলিৎজারকে বলা হয় সাংবাদিকতার পিতামহ। অনুসন্ধানী ও সৃজনশীল সাংবাদিকতায় তিনি কিংবদন্তি।

তিনি ছিলেন ‘সেন্ট লুইস পোস্ট ডিসপ্যাচ’ এবং নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের প্রকাশক।  এ সংবাদপত্রের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতার জগতে নতুন এক ধারা সৃষ্টি করেন।

বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক হলুদ সাংবাদিকতার জনকহাঙ্গেরির বিত্তবান ব্যবসায়ীর ছেলে হলেও বাবার অকাল মৃত্যুতে একেবারে পথে বসতে হয় পুলিৎজারকে। আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে বোস্টনে যখন পা রাখেন তখন তাকে লড়তে হয় মার্কিন গৃহযুদ্ধে। জার্মান অভিবাসীদের নিয়ে গড়ে ওঠা ফার্স্ট নিউ ইয়র্ক ক্যাভালরি রেজিমেন্টে ৮ মাস কাটানোর পর আবারো বেরিয়ে পড়েন পথে, জায়গা হয় মিসৌরির সেন্ট লুইস শহরে। সেখানেই ধীরে ধীরে নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার জোরে প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে তার, সক্রিয়ভাবে মার্কিন রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন, কিনে নেন স্থানীয় পত্রিকা সেন্ট লুইস পোস্ট-ডিসপ্যাচ। ৪ বছরের মধ্যে ‘সেনসেশনাল জার্নালিজমের’ পথিকৃৎ এই দৈনিকটিকে শহরের সবচেয়ে বড় দৈনিকে পরিণত করেন পুলিৎজার, ৪ হাজারেরও কম গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৩ হাজারে! তবে তার সংবাদপত্রের অফিসে রাজনৈতিক কলহের জের ধরে গোলাগুলির ঘটনায় পুরো আমেরিকা জুড়ে পুলিৎজার ও পোস্ট-ডিসপ্যাচের নামে স্ক্যান্ডাল রটে যায়, শহরেও তার নাম-যশ-প্রভাব-প্রতিপত্তি কমে যায় অনেকখানি।

ঘটনার কিছুদিন পর ৩ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেন নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড পত্রিকার মালিকানা। পুলিৎজার ১৮৮৩ সালে যখন পত্রিকাটি কিনেছিলেন তখন এর গ্রাহক ছিল মাত্র ১৫ হাজার, ৩ বছরের মধ্যে পুলিৎজার এই সংখ্যাকে নিয়ে গেলেন আড়াই লক্ষের ঘরে! কী এমন করেছিলেন পুলিৎজার যা তার পত্রিকাকে রাতারাতি শহরের সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যমে পরিণত করেছিল ?

পুলিৎজার প্রথমেই পত্রিকার দাম অর্ধেকে করে দিয়েছিলেন, যেন মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকে। অন্য খবরের কাগজগুলো যেখানে দুই সেন্টের বিনিময়ে সর্বোচ্চ ৪ পাতা কাগজ ছাপত, সেখানে ওয়ার্ল্ডের পাতা থাকত কমপক্ষে ৮ পাতা, কোনো কোনোদিন তা ১২ পাতাও হয়ে যেত। ফলে একই দামে বেশি সংবাদ পাওয়ার আশায় নিউ ইয়র্কাররা একবাক্যে পুলিৎজারের কাগজই কিনে নিত।

তবে পুলিৎজারের পত্রিকার গ্রাহকসংখ্যার বাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ এর চমকপ্রদ বিষয়বস্তু। সাধারণ পাঠকদের বিনোদনের জন্য পত্রিকা জুড়ে কাউকে হিরো আবার কাউকে জিরো করার সংবাদ দিয়ে ভরিয়ে রাখতেন। এছাড়াও পাঠক ধরে রাখার জন্য পেনি প্রেসের ‘চাঞ্চল্যকর সংবাদের আধিক্যের’ কৌশল তো রয়েছেই।

খুন-ধর্ষণ-ব্ল্যাকমেইল-স্ক্যান্ডাল থেকে শুরু করে ছিঁচকে চুরি বা দুর্ঘটনার সংবাদ ফলাও করে ছাপতেন তিনি। এতে পাঠক সংবাদ না পড়ে থাকতে পারতেননা।

পুলিৎজার জানতেন কীভাবে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়। তাই নিতান্ত সাদামাটা সংবাদও বিশাল হেডলাইন আর ছবি দিয়ে পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতেন।আর এভাবেই শুরু করেন হলুদ সাংবাদিকতার।

১৯০২ সালে পুলিৎজার ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উইলে রেখে যান এই প্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য। তবে তিনি তা দেখে যেতে পারেননি, ক্রমেই খারাপ হতে থাকা স্বাস্থ্য নিয়ে নিজ ইয়টেই মারা যান পুলিৎজার।

তার মৃত্যুর পরের বছরই কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট স্কুল অফ জার্নালিজমের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু হয় সাংবাদিকতার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পুলিৎজার।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক বলে যাকে মানা হয়, সেই ব্যক্তিই হলুদ সাংবাদিকতার জনক।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.