জেলা প্রতিনিধি ,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন:: নারায়ণগঞ্জে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্য র্যাবের হাতে আটকের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পাচারকারী দলের সদস্যদের সাথে উদ্ধার করা হয়েছে চার তরুণী, বিপুল সংখ্যক পাসপোর্ট ও বিমান টিকেট।
উদ্ধার হওয়া এক নারী জানান, অভাব অনটনে সংসার চলাতে বাবা মায়ের কষ্ট হচ্ছিল। তখনই গ্রামের এক বোন বলে বিদেশ যাওয়ার জন্য। এর পরই এজেন্ট মো. অনিক হোসেন যোগাযোগ করতে শুরু করে। বলে বিদেশ যেতে কোন টাকা লাগবে না। পাসপোর্টসহ যাবতীয় খরচ তারাই বহন করবে। আর সেখানে গিয়ে ড্যান্স বারের শুধু মডার্ন ড্যান্স হবে এটাই কাজ। বিনিময়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন, মোবাইল, স্বর্ণের চেইনসহ বিভিন্ন উপহারও পাওয়া যায়। এসব কিছু শুনে রাজি হই। এরপর তারা পোশাকসহ বিভিন্ন কেনাকাটার জন্য আমাদের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দেয়। আর আমাদের ছবি তুলে নিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, ‘আমি কোন একাডেমী থেকে ড্যান্স শিখি নাই। তারা বলে সেখানে শিখিয়ে দিবে। পরে একটা হোটেলে ড্যান্স বারের মালিকের সঙ্গে দেখা করায়। এর কিছুদিন পর নির্দিষ্ট তারিখে বিদেশে নিয়ে যায়। বিদেশে যাওয়ার পর পাল্টে যায় পুরো চিত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তরুণী বলেন, বিদেশ নেওয়ার পর এয়ারপোর্ট থেকে একটি গাড়িতে করে নিয়ে একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখে তরুণীদের। প্রথম ১০দিন ড্যান্স বারে নিয়ে তাকে ড্যান্স করায়। কিন্তু এরপর থেকে অসামাজিক কাজ করতে বলে। এতে রাজি না হলে গালাগালি করে, মারধর করে, খাবার দেয় না, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এরপরও রাজি না হলে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অসামাজিক কাজে পাঠায়। সব মেয়েকেই নেশা করিয়ে খদ্দরের কাছে পাঠায়।
তিনি আরও বলেন, ‘এর পর ড্যান্স করায়। খদ্দরের সঙ্গে কথা বলতে পাঠায় ও অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করে। কিন্তু আমাদের ড্যান্সের জন্য কোন টাকা দেয় না। একজন খদ্দরের কাছে গেলে একটি টোকেন দেয়। এভাবে ৫০টি টোকেন জমা দিলে ৫০ হাজার টাকা দেয়। আর প্রতিটি মেয়েকে দিনে ৮ থেকে ১০টি টোকেন নেওয়ার জন্য বাধ্য করে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্য আর এক নারী বলেন, ‘বাংলাদেশি অনেক মেয়ে দুবাইতে আছে। তাদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কেউ গর্ভবতী হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের কোন চিকিৎসা দেওয়া হয় না। তাদের দেশেও পাঠায় না। এনিয়ে এজেন্টদের কাছে বলতে গেলে উল্টো গালাগালি শুনতে হয়। তারা বলে, কোম্পানি টাকা দিয়ে এনেছে। তারা যা বলবে তাই করতে হবে। এজন্য অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হতো না। এছাড়া এজেন্টরা যখন মনে করে তাকে দিয়ে কাজ হবে না তখনই দেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু দেশে ফিরে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায় না তাই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এছাড়া মান সম্মানের ভয়েও যাওয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘আমি চাইনা আমার মতো আর কোন মেয়ে এভাবে প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে জীবন শেষ হোক। তাই কেউ বিদেশ গেলে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে যেনো যায়। আর সরকারের প্রতি অনুরোধ এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’
অভিযানের নেতৃত্বে দেওয়া র্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আলেপ উদ্দিন জানান, তরুণীদের প্রাইভেট সার্ভিস দেখিয়ে টুরিস্ট ভিসায় বিদেশে নেওয়া হতো। আবার ভিসার মেয়াদ শেষ হলে সিন্ডিকেটই আবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। পরবর্তীতে তারা আবারও তাদের প্রলোভন দেওয়া শুরু করে এবার এমন হবে না। শুধু ড্যান্স করবে। এতে রাজি না হলে মানসিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। পরে এ তরুণীরাও এক পর্যায়ে দ্বিতীয় বার যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়।
Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.
Subscribe to get the latest posts sent to your email.