বিনোদন প্রতিবেদক, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: বার বছর ঘুরে এসেছে সতাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিন ব্যাপি চলে এ উৎসব। আর এ ক’দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলে মহোৎসবের আয়োজন।
পূজাকে ঘিরে অনেকের অনেক স্মৃতিই রয়েছে। ছোট বেলার পূজা গুলোকে অনেকেই আবার মিস করেন। সাধারণ মানুষের মতো তারকারা এর বাহিরে নয়। দেশীয় শোবিজের বেশ কয়েকজন তারকা তাদের পূজার স্মতিগুলো রোমন্থন করেছেন। আর সেগুলো তুলে ধরেছেন ডেইলি বাংলাদেশের প্রতিবেদক নাজমুল আহসান।
কুমার বিশ্বজিৎ
পূজার আনন্দ এখন আর মণ্ডপে গিয়ে সেভাবে করা হয়ে ওঠে না। তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল ঢাক বাজানোর প্রতি। বড় ধরনের দুর্বলতা কাজ করত। পূজার ঢাক, মেয়েদের নূপুরের শব্দ আমার সংগীত জীবনের বড় প্রভাব। এ জন্যই তোমরা একতারা বাজাইও না, দোতারা বাজাইয়ো না পূজা থেকে অনুপ্রাণিদ হয়ে কণ্ঠে ধারণ করি। আমার বেশির ভাগ গানে ঢাক-ঢোল রাখার চেষ্টা করি।
চঞ্চল চৌধুরী
যখন পূজাটা উপভোগ করতাম, তখন অনেক ছোট ছিলাম। নতুন পোশাকের আনন্দ ছিল। সারা বছর অপেক্ষা করতাম পূজার জন্য, নতুন পোশাক পাব বলে। বারবার দর্জির দোকানে যেতাম। রীতিমতো দোকানদারও বিরক্ত হতেন। তারপরও যেতাম কারণ বছরে একবার নতুন পোশাক পাওয়া খুবই আনন্দের বিষয় ছিল। ছোটবেলার পূজা ছিল পোশাককে কেন্দ্র করে। দিনের পরিবর্তনে সেই শৈশব, কৈশোর পার হয়ে এসে এখন আমার সন্তান পূজা উৎসবের দিনগুলোতে আনন্দ করবে। এখন সেই আনন্দ পূরণ করার দায়িত্বটা আমার। এখন নিজের জন্য সেভাবে আনন্দ করা হয় না। ছোটবেলায় একমাস আগ থেকে অপেক্ষা করতাম পূজার জন্য।
বিদ্যা সিনহা মিম
পূজার স্মৃতির কথা বলতে হলে অবশ্যই বলতে হবে ছোটবেলার পূজার কথা। তখন তো অনেক আনন্দ হতো। পূজায় মামা বাড়ির যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতাম। মামা বাড়ি পূজার আনন্দ একটু অন্যরকম হতো। পূজা মানেই সকল বেলা উঠে অঞ্জলী দেওয়া। সারা দিন নতুন পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো এবং সবাই মিলে খুব মজা করা। এবার রাজশাহী পূজা করব। পূজার জন্য মঙ্গলবার রাজশাহী চলে আসি। তবে ছোটবেলার পূজা খুব মিস করি। পূজার সময় নতুন পোশাকের অপেক্ষায় থাকতাম, এখনো থাকি। আগে পূজার সময় মণ্ডপে ঘুরতাম, কেউ তেমন একটা চিনতো না। কিন্তু এখন সবাই চেনে। সবাই ঘুরে ঘুরে তাকায়, কাছে আসে এবং কথা বলতে চায়। এখনতো আবার সেলফি’র যুগ। অনেকেই আমার সঙ্গে সেলফি তুলতে চান। অবশ্য এগুলো আমি বেশ এনজয়ই করি।
অপর্ণা ঘোষ
ছোটবেলা ছাড়া স্মরণীয় পূজা আসলে নেই। সে সময়টাতেই পূজা বেশি উপভোগ করতাম। বড় হবার পর পূজায় মজা পাই না। আর ঢাকায় পূজার রেশ খুঁজেও পাই না। চট্রগ্রামের পূজা খুব ইনজয় করতাম। সেখানকার পূজা এখনো অনেক মিস করি। দূর্গা পূজা মানেই চট্রগ্রাম। পূজা মানেই আমার কাছে ছেলেবেলা।
উর্মিলা শ্রাবন্তী কর
আমার জীবনে আর কোনো দিন পূজা হয়তো বিশেষভাবে আসবে না। কারণ, বাবাকে হারিয়ে ভীষন একা হয়ে গেছি। এখন পূজা আসলেই মন খারাপ হয়। বাবা মারা যাবার আগে একটি স্মরণীয় স্মৃতি আছে। মৃত্যুর ছয় দিন আগে আমাকে পাঁচটি শাড়ি কিনে দেয়। সব গুলো শাড়িই ছিল আমার পছন্দের। যার কারণে পূজার সময়টা আমার জন্য এখন বেশ কষ্টের। এটি চিরজীবনের জন্য।
অরুণা বিশ্বাস
প্রতি বছর দূর্গা পূজা এলেই ছোটবেলার সে গল্পটি মনে পড়ে। আমার বয়স তখন ৫ কি ৬ বছর। পূজার দিন আমাকে কুমারি সাজিয়ে দুর্গা মায়ের পাশে বসিয়ে দিতেন ঠাকুর। আর আমাকে সবাই প্রণাম করত। কুমারী পূজার জন্য আমাকে বিশেষভাবে সাজানো হতো। আমার গর্বে বুক ভেসে যেত। কারণ আমাকে কুমারী সাজানো হতো আর সবাই আমাকে দেখে সম্মান প্রদর্শন করতেন। দূর্গা পূজা এলে আরেকটি বিষয় খুব মনে পড়ে। বছরের অন্যান্য দিনে তেমন নতুন কাপড় কেনা হয় না। পূজা এলে বাবা-মায়ের কাছে আবদার করতাম নতুন কাপড় কিনে দিতে। নতুন কাপড় পরে আবার বাবা-মায়ের কাছে টাকাও চাইতাম। এখন বড় হয়েছি সে স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে।
বাপ্পা মজুমদার
আগে পরিবারের সঙ্গে পূজা উদযাপন করতাম। কখনো নানাবাড়ি রাজশাহী, কখনো ভোলায় পূজা কাটত। রাজশাহীতে হলে অনেক মজা হতো। সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম। এলাকার প্রায় সব মণ্ডপে যেতাম। সুন্দর প্রতিমা নির্বাচন করতাম। আরতি দিতাম। কেউ কিছু বলত না। অনেক খাওয়া-দাওয়া হতো। শৈশব-কৈশোরের সেসব দিনগুলো খুব মিস করি। এখন আর সেই মজাটা নেই। কোথাও গেলেই ক্রাউড হয়ে যায়। রাজশাহী কিংবা ভোলাতে যেতে চাইলে আগেই খবর চাউর হয়ে যায়। বিড়ম্বনার মুখোমুখি হই।
দেবী দর্শন বাদ দিয়ে সবাই আমাকেই দর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেলফি তুলতে চায়। মণ্ডপে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তাই নিজেকে আনন্দিত করার মতো ব্যক্তিগত সেই সুযোগটা আর পাই না। পূজা এলে অতীতের কথা খুব মনে পড়ে। এবার পূজা নিয়ে তেমন কোনো বাড়তি আয়োজন নেই। কাজের ফাঁকে সময় করে প্রতিমা দেখতে যাব। বাবা-মা ও পরিবারের অন্যরা সঙ্গে থাকবে। আমি অসাম্প্রদায়িক সুন্দর ও শান্তির বাংলাদেশ চাই।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com