নিজস্ব প্রতিনিধি,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন::তানিয়া আক্তার। কখনো তানি, কখনো এ্যানি, কখনো নদী আবার কখনো সাদিয়া ওরফে ডা. নওশীন নামে পরিচিত। বয়স ২৫। বাড়ি গাজীপুরে। দেখতে সুশ্রী। পোশাকে আধুনিকতা। হাতে দামি ঘড়ি, গলায় কানে দামি অলংকার। প্রথম দেখায় যে কারোরই চোখ আটকে যাবে। গত কয়েক বছর ধরেই এমন চেহারার আড়ালে করতেন রমরমা ব্যবসা। রাজধানীর অভিজাত আবাসিক হোটেল ও পার্টি সেন্টারগুলোতে হর হামেশাই এমন সাজগোজের নারী চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু সবার মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন তানিয়া। কারণ তার উপস্থিতির পেছনে ছিল ভিন্ন উদ্দেশ্য। ধনী কাউকে টার্গেট করে বাসা পর্যন্ত যাওয়া এবং সুযোগ বুঝে চুরি করে সটকে পড়া। যদিও শুরুতে নায়িকা হবার ইচ্ছা ছিল তানিয়ার। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এই নিয়ে প্রতারিত হওয়ার পর এই লাইনে পা দেয় সে।
গত রোববার রাত সাড়ে দশটায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের গুলশান জোনাল টিমের এক অভিযানে গ্রেপ্তার হয় তানিয়া। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে ড্রাইভার কালাম, সহযোগী আসিফ, দুলারী ওরফে আফসানাসহ গ্রেপ্তার হয় সে। এ সময় তানিয়ার ব্যাগ থেকে প্রায় ৬ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার, ১ লক্ষ টাকা ও চুরির কাজে ব্যবহৃত উবার এ চালিত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করে ডিবি পুলিশ।
সাম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুইটি বাসায় স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ চুরি হয়। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় দুইটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। দুটি বাসাতেই ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চুরি করা হয়। প্রথম বাসার বাড়িওয়ালার ছেলের বন্ধুর মাধ্যমে আগে একবার ঐ বাসায় যায় তানিয়া। ওই দিনই টার্গেট করে। এরপর সময় সুযোগ বুঝে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে বাসায় প্রবেশ করে। প্রথমেই ঐ বাসার বিভিন্ন সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। বাসাতে প্রবেশের সময় দারোয়ানকে বলে সে ডাক্তার এবং বাড়িওয়ালার মেয়ের বান্ধবী। ইন্টারকমে এটা শুনে ওই মেয়ের বাবা বাসায় ঢুকতে দেন তাকে। এরপর ভিতরে ঢুকে বলে যে, সে ওমান থেকে এসেছে, তার কাছে থাকা বেশ কিছু ডলার রাখার মত নিরাপদ জায়গা না থাকায় এখানে এসেছে। প্রথমে রাজি না হলেও এক পর্যায়ে বৃদ্ধ লোক রাজি হয়ে খুলে দেন আলমারি। আর সুযোগ বুঝে তানিয়া নিয়ে নেয় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার।
এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় অফিসের দারোয়ান আমাকে ফোন করে বলে, একজন মেয়ে আসছে আমার মেয়ের বান্ধবী নাকি। তারপর আমি তাদের উপরে আসতে বলি। বাসায় এসে এমনভাবে কথা বলে, আমি বুঝতেই পারি নাই যে সে এটা প্রতারক। বাসায় ঢুকে সে আমার মেয়ের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে।
দ্বিতীয় বাসাতেও ঢুকার সময় তানিয়া আশ্রয় নেয় ভিন্ন আরেক কৌশলের। এবার একজনের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্ক হয় হোটেল রেডিসনে এক পার্টিতে। এর ঠিক ১০ দিন পর বসুন্ধরার আরেক বাসায় ঢুকে তানিয়া। সে লন্ডনে থাকা জাবিরের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেয় তার স্ত্রীর কাছে। পরে বেড রুমের আলমারী থেকে নিয়ে যায় স্বর্ণ। ওই তরুণী আসা যাওয়ার সব দৃশ্য দেখা যায় সিটি টিভির ক্যামেরায়। জাবিরের স্ত্রী ফারজানা তাসমী বলেন, আমি তাকে সন্দেহ করার মতো কোন সুযোগই পাইনি। সে এমনভাবে কনফিডেন্টলি কথা বলতে থাকে যে, অবিশ্বাস করার কিছুই ছিল না। সে আমার বাসা থেকে ৩০ ভরি স্বর্ণ, রুপার একটা বারও একটি ডায়মন্ডের আংটি নিয়ে গেছে।
সাধারণত চুরি করতে যাওয়ার সময় তানিয়া তার বিশ্বস্ত এক উবার ড্রাইভার কামালকে ফোন দিয়ে আগে থেকে জানায়। এরপর আরেক সহযোগী আসিফ ড্রাইভার কামালকে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। তানিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুচর হলো দুলারী ওরফে আফসানা। এই দুলারীই সার্বক্ষণিক ছায়া সঙ্গী হিসেবে থাকে তানিয়ার সঙ্গে। আফসানাও গাজীপুরের মেয়ে। চুরি করে নিয়ে আসা স্বর্ণগুলো বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তানিয়া মূলত কাজে লাগায় এই আফসানাকে। চুরি করে আনা সব স্বর্ণ বিক্রি করা হতো উত্তরার মাসকট প্লাজার একটি দোকানে। সেখান থেকে ৫.০৫ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। স্বর্ণ বিক্রিতে সহায়তা করে রেফায়েত নামের একজন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এই চক্রটি এর আগেও এমন ১০ থেকে ১২টি কাজ করেছে। আর তানিয়া দুই একটা ঘটনায় ধরাও পড়েছে। এর মধ্যে কিছু দিন সে জেলেও ছিল। ওই সময় তাকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এবার আমরা সব তথ্য প্রমাণসহ তাকে আটক করেছি। আটক করার পর তাদের আদালতে প্রেরণ করি। আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com