থানা প্রতিনিধি,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন:: নারায়ণগঞ্জের বন্দরে স্থানীয় দৈনিক বিজয় পত্রিকার সাংবাদিক ইলিয়াছকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, মাদক ব্যবসা নিয়ে খবর প্রকাশ করায় সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। এঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার (১১ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে উপজেলার জিওধারা চৌরাস্তা এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পরিকল্পিতভাবে ইলিয়াছকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শনিবার (১০ অক্টোবর) রাতে নারায়ণগঞ্জ সদরের ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো হাসপাতাল জুড়ে।
তাদের সান্ত্বনা দিতে এবং ইলিয়াছের লাশ দেখতে ছুটে আসেন এলাকার শত শত নারী পুরুষ। তবে কোনোভাবেই এ হত্যাকাণ্ডকে মেনে নিতে নিতে পারছেন না নিহতের পরিবার ও স্বজনরা। এসময় নিহত ইলিয়াছের স্ত্রী বিলকিস চিৎকার করে কেঁদে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ইলিয়াছের স্ত্রী বলেন, 'আমার স্বামীর সাথে কারো কোন শত্রুতা ছিল না। ঝগড়া বিবাদ ছিল না। কেন, কি অপরাধে আমার স্বামীকে হত্যা করা হলো? আমি খুনিদের বিচার চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী তাওলাদ হোসেন জানান, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক বিজয়ের সংবাদকর্মী ইলিয়াছকে শনিবার রাত আটটার দিকে জিওধারা চৌরাস্তা এলাকায় একা পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী তুষার ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে ইলিয়াছকে মারধরের পর শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। পরে গুরুতর অবস্থায় ইলিয়াছকে সদরের জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান।
তাওলাদ হোসেন ঘটনার বর্ণা দিতে গিয়ে বলেন, 'আমি দেখলাম তুষার ইলিয়াছকে বাবা মা তুলে গালিগালাজ করে বুকে একটা ঘুষি দেয়। আর বলতে থাকে, তুই কতো বড় সাংবাদিক হইছিস? আমি এখন তোরে দেখাইয়া দিব। এই বলে ইলিয়াছকে মারধর করতে করতে টেনে হেঁচড়ে একটা অন্ধকার স্থানে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর কাছে গিয়ে দেখি ইলিয়াছের গায়ের শার্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তার বুকে ও পেটে তিন চার জায়গায় ছুরিকাঘাতের ক্ষত। সেই ক্ষত স্থান গুলো দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে তার স্ত্রীকে ফোন করে খবর দেই। তারা আসলে আমি সহ এলাকাবাসী ইলিয়াছকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল নেওয়ার পর ডাক্তার ইলিয়াছকে মৃত ঘোষণা করে।'
নিহত ইলিয়াছের ভাগিনা পলাশ বলেন, 'মাদক ব্যবসায়ী তুষার আর তার বাহিনী এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। আমার মামা তাদের বিরুদ্ধে নিউজ করছে বলে তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।'
দৈনিক বিজয় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাব্বির আহম্মেদ সেন্টু বলেন, 'মাদক ব্যবসায়ী তুষার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সাংবাদিক ইলিয়াছকে টার্গেট করে তারা। সেই থেকে ইলিয়াছের প্রতি মাদক ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।' এর জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
তবে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফখরুদ্দিন ভূঁইয়া সময় নিউজকে বলেন, 'সাংবাদিক ইলিয়াছকে কুপিয়ে হত্যার সাথে জড়িত অভিযোগে তুষার নামে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার শরীরের পোশাকের বিভিন্ন অংশে রক্ত লেগে থাকায় ধারণা করা হচ্ছে সে-ই এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। আরও কেউ জড়িত থাকলেও তাদেরকেও আমরা গ্রেফতার করবো।'
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com