মামুনর রশিদ,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::- রাজশাহী তথা সমগ্র দেশের টেবিল টেনিস অঙ্গনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েছেন সারাজীবন,সেই সাথে মুখোমুখি হয়েছেন চরম বাস্তবতার। কখনো বা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে হয়েছেন ওপরের কুচক্রী মহলের অপতৎপরতার শিকার। সেই অবিসংবাদিত মানুষটির নাম এম.হক .নিশান। আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস অঙ্গনের বর্তমানে তিনি একজন আম্পায়ার ও কোচ। মূলত ১৯৮৫ সালের পরপরই তিনি উত্তরবঙ্গের টেবিল টেনিস অঙ্গনের একজন কান্ডারি হয়ে শিশু কিশোর ও মেয়েদের টেবিল টেনিস প্রশিক্ষনের মাধ্যমে নিজের হাতে গড়েছেন অসংখ্য নামি দামি খেলোয়াড়। সম্প্রতি তার ফেসবুকে প্রোফাইলের টাইমলাইনে অনেকটা রাগ,অভিমান আর ক্ষোভের সাথে লিখেছেন টেবিল টেনিস অঙ্গনের অনিয়ম,দুর্নীতি আর অসামঞ্জস্য বিষয়গুলি নিয়ে।এই অবিসংবাদিত ক্রীড়া ব্যাক্তিত্বর লিখাটি আমাদের পাঠকদের জন্য হুবুহু নিম্নে তুলে ধরা হল -
"অনেকদিন পর লিখতে ইচ্ছে হলো। হয়তো আমার প্রিয় খেলা টেবিল টেনিস অঙ্গনে অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখতে দেখতে লিখার প্রয়োজন মনে হলো। এতে যদি কেও বা কোন সংগঠন উপকৃত হয় তাহলে স্বার্থক হবো, শান্তি পাবো। রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্হার বর্তমানে দুর্নীতিপুর্ন কার্যক্রম সম্পর্কে রাজশাহীর প্রায় সব পর্যায়ের ক্রীড়া সচেতন মানুষ জানে। অবশ্য শুধু রাজশাহী বললে ভুল হবে দেশের অধিকাংশ জেলা ক্রীড়া সংস্হা ও ফেডারেশনের প্রায় একই অবস্হা। দক্ষ ব্যাক্তিরা সরে যাচ্ছে,মরে যাচ্ছে,ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সংশ্লিষ্টো বিষয়ে যগ্য ও দক্ষ লোক তৈরির ব্যবস্হা নেই।
আমার মনে হয়, যোগ্য ও দক্ষ রাজনীতিবিদ তৈরির পরিকল্পনা আর যগ্য ও দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরির পরিকল্পনা সম্পুর্ন পৃথক বিষয়। পৃথক অংগনের পরিকল্পনা দুটোকে একাকার করাটা ঠিক হবে না। বর্তমানে দেশে উন্নয়নের জোয়ার চোলছে, সরকার দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স জানিয়েছে। এতে এই অঙ্গনটাও উন্নত হতে পারে। যাই হোক, এবার লিখার মুল বিষয়ে আসি। গত ৩ এপ্রিল বিকেলে প্রায় ছয় বছর পরে জেলা স্টেডিয়াম ভবনের ২তলায় রাজশাহী জেলা টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা- ২০১৯ দেখতে গিয়েছিলাম।
প্রায় ২ ঘন্টা সবকিছু পর্যবেক্ষন করেছি। সাধারনত সময় ও যুগের সাথে সাথে সবকিছুর উন্নতি হয়,কিন্তু যা দেখলাম তা থেকে মনে হলো রাজশাহী টেবিল টেনিসের প্রায় সার্বিক ভাবে যথেষ্টো অবনতি ঘটেছে বা ঘটানো হয়েছে। বিশেষ করে সাংগঠনিক কার্যক্রমে। অবশ্য এটা সাভাবিক কারনেই হয়েছে। কারনটা আমার মনে হলো রাজশাহীর এই অঙ্গন নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব এমন কেও পালন করছে যার বা যাদের এই অঙ্গন সুষ্ঠভাবে পরিচালনা বা প্রতিযোগীতা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের সাধারন ধারনা খুব কম। প্রায় সব কৃতিত্বই মনে হলো অংশগ্রহনকারি কিছু খেলোয়াড়ের। আমরা জানি যে যে বিষয়ে যোগ্য, দক্ষ ও পারদর্শী তাকে সে বিষয়ে দায়িত্ব দেয়াটা সার্বিকভাবে মঙ্গলজনক। রাজশাহীর ক্রিড়াঙ্গন ও টেবিল টেনিসের ঐতিহ্য অনেক পুরোনো যা বর্তমানে প্রায় ধংশের পথে। বর্তমানে দায়ীত্বে নিয়োজিতদের কাজের নমুনা দেখে মনে হলো স্থানীয় নতুন খেলোয়াড় তৈরির জন্য স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষন ও জেলা দলের খেলোয়াড়দের খেলার মান উন্নয়নের জন্য উন্নতমানের টেবিল টেনিস সামগ্রী সরবরাহ ও সঠিকভাবে অনুশীলনের আয়োজন করার ইচ্ছা থাকলেও যোগ্যতা নেই। যাই হোক এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে সংবাদপত্রে ঘোষনার দিন থেকে ৩ মে পর্যন্ত বেশ কিছু সমস্যা দেখলাম,যা সংক্ষেপে জানাচ্ছি -- ২৩ এপ্রিলের স্হানীয় সংবাদপত্রে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের শেষ তারিখ ২৬ এপ্রিল এবং প্রতিযোগিতা শুরু ২৮ এপ্রিল প্রচার হয়েছে।
যা অনেক ক্লাবের পক্ষে সুষ্ঠোভাবে দল গঠনের জন্য যথেষ্টো সময় নয়। সংবাদ পত্রে ঘোষনার দিন থেকে এন্ট্রির শেষ দিনের মধ্যে কমপক্ষে ৫/৭ দিন সময় থাকা উচিত। বিশেষ কোরে এই ধরনের প্রতিযোগীতায়। দ্বৈত ও মিশ্র দ্বৈত বিভাগে জুটির নাম এন্ট্রির সাথে সংবাদপত্রের ঘোষনায় চাওয়া হয় নাই,যা সুষ্ঠো ফিক্সচার তৈরির জন্য গুরুত্বপুর্ন বিষয়।এন্ট্রি ফি ছাড়া শুধু খেলোয়াড়দের রেজিস্ট্রেশন ফরম জমা নেয়া হয়েছে। প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত জিমনেশিয়ামে বা এমন জায়গায় যেখানে আলো,বাতাস ইত্যাদির সমস্যা থাকবে না,ব্যানার ফেস্টুন ইত্যাদি দিয়ে সুসজ্জিত থাকবে।
দুঃক্ষের বিষয় সেটা এমন এক জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে যেখানে ঐ দুটো সমস্যা ছিল। জায়গাটা সুসজ্জিত ছিল না এবং এই ধরনের প্রতিযোগিতার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না। একটা টেবিলে অপর্যাপ্ত জায়গায় অসুবিধার মধ্যে খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতা খেলতে হয়েছে। প্রায়ই খেলোয়াড়দের নিজেদের বলে খেলতে হয়েছে। দর্শক ও খেলোয়াড়দের বসার পর্যাপ্ত ব্যাবস্হা নেই, প্রায় সবাইকে দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থেকে খেলতে ও দেখতে হয়েছে। কোন স্কোর সিট ব্যাবহার করা হয় নাই। কোন বাইলজ ও ফিক্সচার উন্মুক্ত ছিল না। যা পক্ষপাতিত্ব, ষড়যন্ত্র ও সেচ্ছাচারিতার অন্যতম নমুনা। যা দল ও খেলোয়াড়দের সার্বক্ষনিক দুস্চিন্তার বিষয়। আম্পায়ার্স টেবিল ছিল না,আম্পায়ার হিসাবে প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেছে অংশগ্রহনকারি কিছু খেলোয়াড়। পুরুষ বিভাগের খেলায় অনিয়মের ও সেচ্ছাচারিতার নমুনা দেখেছি।
সবচেয়ে অবাক হয়েছি প্রতিযোগিতার ব্যানার খেলার স্হানে না দেখে। অনুশিলন না প্রতিযোগিতা তা সহজে বুঝার উপায় ছিল না। আরো অবাক হয়েছি সাত দিনের এই প্রতিযোগিতা নকআউট পদ্ধতিতে হয়েছে, খেলা চলাকালিন দলবদল, দলগত, দ্বৈত ও মিশ্র দ্বৈত প্রতিম্যাচ বেস্ট অফ থ্রি গেমে হয়েছে। প্রতিযোগিতায় সর্বমোট সর্বচ্য প্রায় ২০/৩০ জন খেলোয়াড়। ৪টা বিভাগের (দলগত,একক,দ্বৈত ও মিশ্র দ্বৈত) খেলা, সরাসরি লীগ পদ্ধতিতে করা সম্ভব না হলেও গ্রুপ লীগ পদ্ধতিতে বেস্ট অফ সেভেন সম্ভব না হলেও বেস্ট অফ ফাইভ গেমে করলে আকর্ষনীয় হতো। এটা ছিল স্হানীয় প্রতিযোগিতা, করবিলন কাপ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান কোন দলে বা দলগুলোতে সব খেলোয়াড় যদি রাজশাহীর বাইরের(জাতীয় পর্যায়ের)হয় তাহলে এটাকে স্হানীয় বা জেলা প্রতিযোগিতা বলা কি ঠিক হবে? যা দেখে হতাশ হয়েছি। ভবিষ্যতে রাজশাহী লীগে করবিলন কাপ পদ্ধতির খেলায় প্রতিদলে একজন করে বাইরের(জাতীয় পর্যায়ের) খেলোয়াড় অংশ নিলে আমার বিশ্বাষ সেটা সার্বিক ভাবে মঙ্গলজনক হবে। সাত দিনের প্রতিযোগিতা ৪ মে রাত্রে শেষ হলেও পুরস্কার বিতরনীর ঘোষনা দেয়া হয়েছে ৫ মে বিকাল ৫টায়।
রাজশাহীর বাইরের পুরস্কার বিজয়ী খেলোয়াড়রা ৪ মে বিকালের ট্রেনে পুরস্কার না নিয়েই রাজশাহী ত্যাগ করেছে। এটাও অব্যাবস্হাপনার অারেকটি উল্লেখযগ্য ও দুঃক্ষজনক ঘটনা। আমি আশা করবো পরবর্তিতে এসব অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে রাজশাহীর স্থানীয় খেলোয়াড়রা এবং বাইরের অংশগ্রহনকারি খেলোয়াড়রা প্রতিবাদি ভুমিকা রাখবে। রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্হার সবধরনের শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্যেও ব্যাক্তির বা ক্লাবের স্বার্থ দেখতে গিয়ে রাজশাহীর টেবিল টেনিস ও ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক উন্নয়ন ও সাফল্যের ব্যাপারে উদাসিনতা, ব্যার্থতাপুর্ন ও ধংশাত্বক কার্য্যক্রম কারো কাম্য নয়। যাইহোক, জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের টেবিল টেনিস ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ঠো নির্বাহীদের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিবেন এই আশা নিয়ে অনেক দুঃক্ষ ভারাক্রান্ত মনে এই লিখা পোষ্ট করলাম। ধন্যবাদ।
........................................................................................................................................................ উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com