নিজস্ব প্রতিবেদক,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পবা থানার ওসি গোলাম মোস্তফা। কখনো কখনো থানায় বসে যুবলীগ নেতার জন্মদিন পালন করে আবার কখনো এজাহারভুক্ত আসামীকে নিয়ে ইফতারি করে আবার কখনো এজাহারভুক্ত আসামী বাদে একই নামের অন্য মানুষকে ধরে এনে মামলা দিয়েও আলোচনা সমালোচনার পাত্র হয়েছেন বারবার। সমালোচনা তার পিছু ছাড়েনি নাকি তিনি সমালোচিত হতেই ভালবাসেন তা কারোও বোধগম্য নয়।
আর বারবার বিতর্কিত হওয়া সেই ওসি গোলাম মোস্তফা এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে আরএমপি ধারায় চালান দিয়ে এবার পুলিশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে,যা দেখে সবার চক্ষু-চড়কগাছ।
গত মাসের বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১২/১১/২০২০ তারিখ রাত্রী আনুমানিক ১০টার সময় রাজশাহী পবা থানার এএসআই কামাল ও এএসআই আরিফসহ সঙ্গীয় ফোর্স পবা থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় চিরুনী অভিযান চালায়।
এসময় পবা থানাধীন সবসার এলাকার মোঃ রয়েল সরকার, পিতাঃ মোঃ আজাদ সরকার সাংঃ সবসার, থানা-পবা, জেলাঃ রাজশাহী,নামের একজনকে গ্রেফতার করে পবা থানার এএসআই আরিফ ও এএসআই কামাল।
রয়েল সরকারকে গ্রেফতারের সময় অত্র এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ এএসআই কামাল ও এএসআই আরিফকে প্রশ্ন করলে তারা জানান - পবা থানার ০৪/০২/২০১৯ ইং তারিখের ১২ নং মামলার
ওয়ারেন্ট আসামী হিসেবে রয়েলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তাকে চালান দেয়া হবে।
কিন্তু পরেরদিন,গত ১৩/১১/২০২০ তারিখ শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে রয়েলকে ওয়ারেন্ট মামলায় চালান না দিয়ে তাকে আরএমপি ধারায় চালান দেওয়া হয়।
এই নিয়ে এলাকার সুশিল সমাজের মানুষের মনে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়,তারা অভিযোগ করে বলেন,পবা থানায় ওসি গোলাম মোস্তফা আসার পর থেকে থানার বেশ কিছু পুলিশ অফিসার বিভিন্ন রকম আইন-বহির্ভূত কাজে লিপ্ত হচ্ছে।
এছাড়াও এলাকার প্রায় সকল মাদক ব্যবসায়ীরা নিয়মিত থানায় মাসোয়ারা দিয়ে তাদের অবৈধ ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে।
ওরেন্ট মামলার আসামিকে আরএমপি মামলায় চালান দেয়ার বিষয়টি জনসম্মুখে জানাজানি হয়ে গেলে থানা পুলিশ রয়েলকে গ্রেফতার করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন তখন পরিস্থিতি খারাপ দেখে কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে বর্তমানে রয়েল এখন জেল-হাজতে।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলা হওয়ার পর থেকে আসামী রয়েল মাসোয়ারা হিসেবে ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা করে থানায় দিয়ে আসছিল।তাই এতদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
তবে সম্প্রতি অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারনে রয়েল এক মাস মাসোহারা দিতে না পারায় তাকে গ্রেফতার করে পবা থানা পুলিশের এএসআই কামাল ও এএসআই আরিফ।ওয়ারেন্টর আসামি হিসেবে রয়েলকে গ্রেফতার করলেও থানায় নিয়ে আসার পর ৩৫,০০০ (পয়ত্রিশ হাজার) টাকার বিনিময়ে ওসি গোলাম মোস্তফার নির্দেশে তাকে ওরেন্ট মামলায় চালান না দিয়ে আরএমপি ধারায় চালান দেন এএসআই কামাল ও এএসআই আরিফ।
এছাড়াও উক্ত বিষয়ে আরোও খোজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ওসি গোলাম মোস্তফার যত নির্মমতা,প্রায় ৩ মাস পূর্বে পবা বড়গাছি ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন,কিছু দরিদ্র জেলে (মাছ ধরে যাদের সংসার চলে) পদ্মা নদীতে সুতি জাল দিয়ে মাছ ধরছিলো।
এসময় পদ্মা নদীতে মাছ ধরার অপরাধে ২ জন জেলের জাল ধ্বংস করে পবা থানার ওসি গোলাম মোস্তফা এবং এই কথা বলা হয় আর কাওকে যদি মাছ ধরতে দেখা যায় তাহলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।
কিন্তু তার ১ দিন পরেই আরোও কয়েকজন জেলেকে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে দেখা যায়,তখন তাদেরকে(জেলেদের) পুলিশের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বললে জেলেরা বলে আমরা ওসি গোলাম মোস্তফাকে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা দিয়েছি এবং প্রতি মাসে ১০,০০০(দশ হাজার)টাকা দিতে হবে এই চুক্তিতে পূনরায় মাছ ধরার অনুমতি পেয়েছি।
ওয়ারেন্টের আসামি রয়েলকে আরএমপি ধারায় চালান দেয়ার বিষয়ে এএসআই কামাল ও এএসআই আরিফের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তারা বলেন আসামি রয়েলকে আমরা ওসি স্যারের নির্দেশে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি এবং ওসি স্যারের নির্দেশেই তাকে আরএমপি ধারায় কোর্টে চালান করি।
পবা থানার ওসি গোলাম মোস্তফার সরকারি নাম্বারে ফোন দিয়ে উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন রয়েল কে কোন ওরেন্ট মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়নি তাকে মাদক সম্পর্কিত বিষয়ে গ্রেফতার করা হয় কিন্তু যেহেতু তার কাছে কোন অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি তাই তাকে কোন মামলা না দিয়ে আরএমপি ধারায় চালান দেয়া হয়।
রয়েলকে গ্রেফতার করা পর্যন্ত তার নামে আমাদের থানায় কোন ওরেন্ট ছিল না।আর জেলেদের বিষয়ে যানতে চাইলে তিনি সব কিছু অস্বীকার করে বলেন এই রকম কোন ঘটনা আমার জানা নেই।
তবে উল্লেখ্য যে রয়েলের নামে যে মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল সেই মামলার রয়েলসহ আরোও দুইজন আসামি আছে, হাসিব ও শুভ ওদের দুজনকে পবা থানা প্রায় আট মাস আগে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে।কিন্তু আসামি রয়েল নিয়মিত মাসিক মাসোয়ারা দিত বলে তাকে গ্রেফতার করেনি পবা থানা পুলিশ।
প্রকাশক:ফাহমিদা খান, প্রধান সম্পাদক:এম.এ.হাবিব জুয়েল,বার্তা সম্পাদক : রমজান আলী কর্তৃক উত্তরা ক্লিনিক মোড়,উপশহর,বোয়ালিয়া,রাজশাহী-৬২০৩,বাংলাদেশ থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত।বার্তা কক্ষ ০১৭১৫৩০০২৬৫ । ইমেইল: uttorbongoprotidin@gmail.com