আতিক জঙ্গী হয়েছিল যেভাবে

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

আতিক জঙ্গী হয়েছিল যেভাবেস্টাফ রিপোর্টার,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন :: বাবা শ্যালো মেশিনের মিস্ত্রি। মা গৃহিণী। বাড়িতে আছে ছোট একটি বোন। গত ৭ সেপ্টেম্বর পরিবারের কথা না শুনে এক প্রকার জোর করেই ১৩০ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় আতিক। বাড়িতে জানিয়েছিল সে রাজশাহীর একটি বড় মাদ্রাসায় ভর্তি হবে। পরে মুঠোফোনে মাকে জানায় সে রাজশাহীর দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে।

আতিক গত দুই দিন আগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শেরখালি উকিলপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের অভিযান গ্রেফতার হওয়া চার জনের একজন। তার বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলার ৫ নং শশরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের শশরা শাহাপাড়া গ্রামে।

পুরো নাম নাম আতিউর রহমান আতিক (১৯)। সে ওই গ্রামের মানিক হোসেনের ছেলে। এক ভাই এক বোনের মধ্যে আতিক বড়। গত বছর জেলার সদর উপজেলার ৫ নং শশরা ইউনিয়নের কাশিপুর ডাঙ্গাপাড়া মিনহাজুদ-দাওয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে।

আতিকের বাসায় গিয়ে তার বাবা-মা, ছোট বোনকে পাওয়া যায়। বাড়িতে রয়েছে দুটি টিনশেড ঘর। আরসিসি পিলার দিয়ে চলছে বাড়ি নির্মাণের কাজ। বাড়িতে অনেক চটি ইসলামি বই দেখা যায়।

আতিকের মা আসমিন আরা (৪০) জানান, প্রথমবার সে দাখিলে এক বিষয়ে রেফার্ড পায়। গতবার পাশ করে। রেফার্ড পাওয়ার পর থেকে তার চলাফেরায় একটু অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেন তারা। আতিকের মা বলেন, ‘ছেলে তখন কারও সঙ্গে তেমন মিশতো না। প্রায় সময় ঘরের ভেতর মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকতো। এরপর রাজশাহীতে যাওয়ার জন্য টাকা চাইতো।’

একমাত্র ছেলে বাইরে গিয়ে থাকুক মা তা চাইতেন না। কিন্তু গত ৭ সেপ্টেম্বর ১৩০ টাকা নিয়ে এক প্রকার জোর করেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় আতিক। পরে মাকে জানায় দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য রাজশাহীতে অবস্থান করছে। কিন্তু সে কিভাবে চলছে তা তারা জানতেন না। মোবাইল করলে অনেক সময় তাকে পাওয়া যেতো না। পরে সে জানাতো মাদ্রাসায় কোচিংয়ে আছে। সর্বশেষ তাদের সঙ্গে কথা হয় বৃহস্পতিবার সকালে।

ছেলে ধরা পড়ার বিষয় জানতে চাইলে আতিকের মা কিছুই জানেন না বলে জানান। কিন্তু টিভিতে জঙ্গি ধরা পড়ার খবর শুনেছেন বলে জানান। আসমিন আরা বলেন, ‘মিনহাজুদ-দাওয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার বড় হুজুর ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ তাকে প্রায় এসে বাসা থেকে নিয়ে যেতো। কোনও কোনও সময় অন্য কাউকে পাঠিয়ে নিয়ে যেতো পাগড়ি পরিয়ে দেওয়ার জন্য।’

মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া আতিকের বোন নুরে জান্নাত জানান, তার ভাই ৩টি সিম ব্যবহার করতো। বর্তমানে তারা তিনটি সিমই বন্ধ। ভাইয়ের চলাফেরা নিয়ে তারও সন্দেহের কথা জানায় নুরে জান্নাত।

এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে মানিক হোসেনের সংসার। নিজে পড়াশুনা কিছুই জানেন না। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। ফোনে শুধু টাকা চেয়েছে বাবার কাছে। জানিয়েছে রাজশাহীতে মাদ্রাসায় ভর্তি হবে। এ বাইরে তিনি কিছুই জানেন না।

এ ব্যাপরে শনিবার দুপুর ১২টায় মিনহাজুদ-দাওয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার বড় হুজুর ইব্রাহীম খলিলুল্লাহর সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠানে দেখা করে জানতে চাইলে তিনি জানান, আতিউর রহমান আতিক তার ছাত্র ছিল। পরিবারের দাবি অনুযায়ী নিবিড় সম্পর্কের বিষয় জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি লেবানন থেকে পড়াশোনা করে এসেছি। আমি সব সময় জঙ্গি বিরোধী। আতিকের সঙ্গে আমার জঙ্গির সম্পৃক্ততা কোনোভাবেই মেলে না।’

পুলিশ প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, এখনও কোথাও থেকে তাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। তারা টিভি দেখে ও খবরের কাগজে খবর পড়ে নিজেদের মতো তদন্ত করছেন।


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.