গোদাগাড়ীতে আসামিকে গ্রেফতারের পর হত্যা,ঘটনা ধামাচাপা দিতে বজ্রপাতে মৃত্যুর নাটক

Rajshahi_Pet_Care
উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

হত্যাকাণ্ডে ৫ পুলিশ জড়িত থাকার অভিযোগনিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন ::

রাজশাহী গোদাগাড়ী অঞ্চলে মাদক ব্যবসায়ীদের কাতারে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি চাকুরিজীবিরাও জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। গোদাগাড়ী থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কখনো কখনো সরাসরি মাদক কারবারে জড়িত বা মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার অভিযোগ ওঠে।

গত ২২ মার্চ গোদাগাড়ীর দেওয়ানপাড়া পদ্মার চর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পোলাডাঙ্গা গাইনপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের পুত্র রফিকুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পর থানা পুলিশ- রফিকুল বজ্রপাতে মারা গেছেন বলে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।

তবে ইসার জবানবন্দীতে উঠে আসে পুলিশের দলটি গত ২১ মার্চ রাতে একই এলাকা থেকে আজাদ আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিককে (৩২) ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক করেন। ওই রাতেই পিটিয়ে হত্যা করা হয় রফিকুলকে। অথচ মাদক উদ্ধার মামলায় তাঁকে পলাতক আসামি হিসেবে দেখানো হয়। পরের দিন ২২ মার্চ সকালে রফিকুল ইসলামের লাশ পদ্মার চরে পাওয়া যায়। কিন্তু লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য রামেক মর্গে পাঠালেও রফিকুল বজ্রপাতে মারা গেছেন থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।কিন্তু এলাকাবাসী বলছে ১ কেজি হেরোইনের জন্যই মেরে ফেলা হয় রফিকুলকে ।

অন্যদিকে ৫ পুলিশ জড়িত থাকার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলামের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। ওই ঘটনার তদারকির দায়িত্বে থাকা আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তাঁদেরও জোরালো ভূমিকা ছিলো বলেও সন্দেহ করছেন অনেকেই। এমনকি ঘটনার পরে তিনজনকে বদলি করাও হয় তাদেরকে রক্ষা করার জন্য। তবে ওসি খাইরুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে গোদাগাড়ী থানায় যোগদান করেন। এ কারণে ওই ঘটনার কোনোকিছুই বুঝে উঠতে পারেননি।

তবে ঘটনা আড়াল করতে হতাকাণ্ডে জড়িত থাকা ৩ পুলিশ সদস্যকে দ্রুত গোদাগাড়ী থেকে বদলি করা হয়। তবে এখনো গোদাগাড়ীতেই কর্মরত আছেন অপর ২ পুলিশ সদস্য । এদিকে হত্যাকণ্ডের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যরা প্রত্যেকেই মাদকের গডফাদারদের বন্ধু হিসেবে এখনো গোদাগাড়ীতে তাদের বেশ নাম-ডাক রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।রাজশাহী গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একেবারে নিচের সারির মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও রয়েছে তাঁদের বেশ সখ্যতা। তাঁদের মধ্যে এসআই আব্দুল মান্নান ছিলেন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের পরম বন্ধু। আর টাকার জন্য ধরে আনতেন ছোট ছোট মাদক ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষদের। যারা তাঁকে নিয়মিত টাকা দিতেন, তারা পেতেন মাফ। আর যারা দিতেন না তাদেরকে করা হতো হয়রানি।

এই পুলিশ মান্নান কে গত শনিবার ক্লোজড করা হয়। রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার এসএম মাসুদ হোসেন তাঁকে ক্লোজড করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। শনিবার বিকেলে তাকে বাগমারা থানা থেকে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়। জানা গেছে, প্রায় দুই বছর ধরে এসআই মিজানুর রহমান ও কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম এখনো গোদাগাড়ী থানায় কর্মরত আছেন। আর মাস দুয়েক আগে এসআই মান্নান ও কনস্টেবল শাহাদাতকে বাগমারা থানায় বদলি করা হয়। এসআই রেজাউলকে পাবনার ইশ্বরর্দী থানায় বদলি করা হয়। কনস্টেবল শাহাদত বাগমারার জুগিপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে রয়েছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন, গোদাগাড়ী মাদকের স্পট বলে পরিচত হওয়ায় এখানে আসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজর থাকে সেইদিকে। ফলে দ্রুতই তারা বাড়তি অর্থ কামায় করতে মাদক ব্যবসায়ীদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে অভিযোগ ওঠা ৫ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বেশি বেপরোয়া। তারা অনেককেই ধরে আনতেন শুধু টাকা আদায়ের জন্য। না হলে মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হত। আবার টাকা পেলেই ছেড়ে দেওয়া হত। এভাবেই চলতো মাদক অভিযানের নামে মানুষকে হয়রানি ও টাকা আয়ের পন্থা। এখনো পুলিশের এই কার্যক্রম মাঝে মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় বলেও দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই।

 


উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের সংবাদটি শেয়ার করুন

Discover more from UttorbongoProtidin.Com 24/7 Bengali and English National Newsportal from Bangladesh.

Subscribe to get the latest posts sent to your email.